আর্জি: সাহায্য চাইছেন পুরোহিত বাসুদেব ভট্টাচার্য। গলসিতে। —নিজস্ব চিত্র।
পরনে ধুতি-নামাবলি, গায়ে ঝুলছে পৈতে। গ্রামের মসজিদতলায় দাঁড়িয়ে প্রৌঢ় মানুষটি আর্জি জানাচ্ছিলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। কেউ সাহায্যে এগিয়ে এলে ভাল হয়। কথা শেষ করার আগেই তাঁকে আশ্বস্ত করেন শেখ রহমান, শেখ হাফিজুলেরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা সবাই সঙ্গে আছি।’’
পূর্ব বর্ধমানের গলসির কোলকোল গ্রামের ওই প্রৌঢ় বাসুদেব ভট্টাচার্য রাম মন্দিরের পুরোহিত। চাষাবাদ, দিনমজুরি বা একশো দিনের কাজ করে দিন চলে গ্রামের হাজার পাঁচেক মানুষের। গ্রামের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। বাসুদেববাবুর স্ত্রী মিনতিদেবীর চিকিৎসার জন্য এককাট্টা হয়েছেন সকলেই। পুরোহিত বলছেন, ‘‘স্ত্রী যখন যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন, চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের চিন্তায় মন্দিরে মাথা ঠুকেছি। তার পরেই তাহের আলি, হাফিজুলদের ভরসায় মসজিদতলায় গিয়ে সাহায্য চেয়েছি। ওঁরা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।’’
বাসুদেববাবুর বাড়ি বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে। তবে মন্দিরে পুজো করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে গলসিতে রয়েছে। মাস কয়েক আগে স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে স্ত্রী মিনতিদেবীর। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। বাসুদেববাবুর প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ মল্লিক বলেন, ‘‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য খরচে অনেকটা সুরাহা হয়েছে। তবু বারবার হাসপাতালে যাতায়াত, ওষুধ, ইঞ্জেকশন-সহ নানা বিষয়ের জন্য লাখ দেড়েক টাকা প্রয়োজন। গ্রামবাসীরা এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন।’’
বাসুদেববাবু জানান, গ্রামের উত্তরপাড়া মসজিদতলায় সাহায্যের আবেদন জানানোর পরে প্রায় ১৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। ওই পাড়ার বাসিন্দা শেখ মকবুল বলেন, “আমি নিজে টাকা দিতে পারিনি। তবে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে চাঁদা তুলে দিয়েছি।” তাহের আলি, ফজিলা বেগমদের কথায়, “গ্রামের অনেকেই খুব গরিব। ঠিকমতো খাবার জোটে না। কিন্তু আমরা সবাই থাকতে এক জন বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন, তা কখনও হয়! সবাই সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছেন।’’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা মোর্তেজা আলি খান বলেন, ‘‘বিপদে পাশে দাঁড়ানোই তো ধর্ম। আমরা সেটুকুই পালন করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy