Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চেয়েও কাজ মিলছে না জঙ্গলমহলে

কেন্দ্রের শ্রম বাজেট অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম জেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৫১ লক্ষ ১২ হাজার শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। প্রশাসন সূত্রে দাবি, চলতি অর্থবর্ষে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১ লক্ষ ২১ হাজার ১২৮টি পরিবারকে গড় প্রায় ৫৫ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫২
Share: Save:

দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত ভোট। ভোটের আগে সরকারের সাফল্য ফলাও করে প্রচারে জোর দিয়েছে শাসকদলের নেতৃত্ব। অথচ সেই জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামেই আবেদন করেও নতুন করে একশো দিনের কাজের অনুমোদন পাচ্ছে না ব্লকগুলি। তার জেরে অভাবী মরসুমে কাজ চেয়েও পাচ্ছেন না জঙ্গলমহলের জব কার্ডধারী বাসিন্দারা।

কেন্দ্রের শ্রম বাজেট অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম জেলায় ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে ৫১ লক্ষ ১২ হাজার শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। প্রশাসন সূত্রে দাবি, চলতি অর্থবর্ষে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১ লক্ষ ২১ হাজার ১২৮টি পরিবারকে গড় প্রায় ৫৫ দিন কাজ দেওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে জেলার ১৪ হাজার ৫১৬টি পরিবারকে পুরো একশো দিনই কাজ দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি। ৬৬ লক্ষেরও বেশি শ্রমদিবস তৈরি করা গিয়েছে জেলায়। তাই একশো দিনের প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি নতুন কাজের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করলেও বরাদ্দ মিলছে না বলে অভিযোগ।

ফাল্গুন-চৈত্রের অভাবী মরসুমে সব জায়গায় বোরো চাষ হয় না। তাই এই সময় একশো দিনের কাজ চেয়ে ভূরি ভূরি দরখাস্ত জমা পড়ছে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। কাজের অভাবে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ির মতো প্রত্যন্ত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, জব কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। কাজ না পেয়ে বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। মাস দু’য়েক এই পরিস্থিতি চলায় অস্বস্তিতে শাসক দলও।

নবান্নের নির্দেশ হল, মাওবাদী প্রভাবিত স্পর্শকাতর এলাকার মানুষজনকে কাজ দিতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলার ৮টি ব্লকের মধ্যে লালগড়, বেলপাহাড়ি, গোপীবল্লভপুর-১, জামবনি, নয়াগ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। একমাত্র ঝাড়গ্রাম ও গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম কাজ হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে জেলায় একশো দিনের কাজের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় কাজের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ওই দু’টি ব্লকেও নতুন করে কাউকেই কাজ দেওয়া যাচ্ছে না। বেলপাহাড়ির ডাইনমারি গ্রামের বাসিন্দা শকুন্তলা হাঁসদা, গঙ্গারানি সর্দার বলেন, “আমাদের গ্রামে দু’শো পরিবারের জব কার্ড থাকলেও চলতি আর্থিক বছরে একদিনও কাজ মেলেনি।”

তবে একশো দিনে লক্ষ্যমাত্রার বেশি কাজ হওয়ার দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের অভিযোগ, “পরিসংখ্যানের পাল্লা ভারী হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত মানুষজন কাজ পাননি। কাজ দেওয়ার নামে চূড়ান্ত স্বজনপোষণও হয়েছে।” বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েই যদি কাজ হয়ে থাকে, তাহলে এখনও বহু এলাকায় বাসিন্দাদের জব কার্ডের পাতা সাদা কেন?” অভিযোগ অস্বীকার করে ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের সভাধিপতি সমায় মাণ্ডি বলছেন, “একশো দিনে জেলায় উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে।”

এ বিষয়ে একশো দিনের প্রকল্পের ঝাড়গ্রাম জেলার নোডাল অফিসার শান্তনু দাস বলেন, “লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় নতুন করে কাজ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ছাড়পত্র মিলছে না। নতুন আর্থিক বছরে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জেলার সব ব্লকে কাজ দেওয়া শুরু হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram 100 days work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE