Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দশ বছরে এমন ছাত্র দেখিনি, বলছে স্কুল

শুক্রবার অঞ্জুদেবী ফোনে জানালেন, রবিবার আচমকা জ্বর এসেছিল ছেলের। কোমরে হালকা ব্যথাও ছিল। পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, বাবা রঞ্জিত দাস পরীক্ষার আগে ঝুঁকি না নিয়ে এক অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ এনেছিলেন।

স্মৃতি: অরিজিৎ দাস।

স্মৃতি: অরিজিৎ দাস।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
নলহাটি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০২:৩১
Share: Save:

স্কুলের পরীক্ষায় কখনও দ্বিতীয় হয়নি। মাধ্যমিকের টেস্টে পেয়েছিল ৯৬ শতাংশ নম্বর। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে সার্বিক প্রস্তুতিতে এতটুকু ফাঁকি ছিল না বীরভূমের নলহাটির অরিজিৎ দাসের (১৬)। সহপাঠী, বন্ধুরা তো বটেই ‘চিকিৎসার গাফিলতি’তে এমন মেধাবী ছাত্রের অপমৃত্যু মানতে পারছেন না স্কুলের শিক্ষকেরাও। তবে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত মা অঞ্জুদেবীর কাছে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর পৌঁছয়নি বলেই জানা গিয়েছে।

শুক্রবার অঞ্জুদেবী ফোনে জানালেন, রবিবার আচমকা জ্বর এসেছিল ছেলের। কোমরে হালকা ব্যথাও ছিল। পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, বাবা রঞ্জিত দাস পরীক্ষার আগে ঝুঁকি না নিয়ে এক অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ এনেছিলেন। তবু মাথাব্যথা কমেনি। রাতে পড়তেও পারেনি। অঞ্জুদেবীর কথায়, ‘‘সোমবার খুব কষ্ট করে পরীক্ষা দেয়। বাড়ি ফিরে ঘাড়, কোমরের ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। রাতে ফের নলহাটির এক চিকিৎসকের নিয়ে যাওয়া হয়। মঙ্গলবার সকালে একটু সুস্থ হয়ে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু, বেলা গড়ালে ফের ব্যথা শুরু হয়। হাসপাতাল থেকে ইঞ্জেকশন দিয়ে রাত দু’টোর সময় বাবা-ছেলে বাড়ি ফেরে।’’

বুধবার, ভূগোল পরীক্ষার আগে শরীর এতটাই ভেঙে পড়ে কেউ ভাবেননি অরিজিৎ পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু, অদম্য জেদ আর ইচ্ছেশক্তির জোরে পরীক্ষা দেয়। তার পরেই সোজা রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, মেডিসিনের দু’জন চিকিৎসককে দেখানো হলে তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু, রামপুরহাট হাসপাতাল রেফার করে দিলে বর্ধমানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে আসার পথে মৃত্যু। যা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক। অরিজিতের পরিজনদের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এক জন বড় চিকিৎসক’ রাখার কথা বললেও ওই ব্যক্তি আসলে এসি সারানোর মিস্ত্রি! পরিজনেরা এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন।

নলহাটির ভবানন্দপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌরভ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে ওকে দেখছি। এত মেধাবী ছেলে দশ বছরের শিক্ষক-জীবনে দেখিনি। স্কুলের যে কোনও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা, যুব সংসদ প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ — সবেতেই পারদর্শী ছিল।’’ সহকারী শিক্ষক বিধানচন্দ্র সাহা বলছেন, ‘‘প্রতিটি বিষয়ের অন্তত চারটে করে সহায়ক বই পড়েছিল অরিজিৎ। আমরা এক জন রত্নকে হারালাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arijit Das অরিজিৎ দাস Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE