Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মহুয়া খুনে অভিযুক্ত স্বামীর ফাঁসি চান পড়শিরা

বছর আঠাশের মহুয়া ঘোষের দেহ পুলিশ পেয়েছিল ১৯ জুলাই, বুধবার। তবে অ্যাসিডে বিকৃত মুখ দেখে চেনা যায়নি তাঁকে। মহুয়াদেবীর শাশুড়ি ছবিরানি ঘোষের ফোন পেয়ে তাঁর খোঁজ শুরু করেন পড়শিরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুচন্দ্রা দে
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৭ ০৪:৫৮
Share: Save:

ছটফট করছে ছোট্ট ছেলে। বারবার ঝাঁপিয়ে মায়ের কাছে যাওয়ার জেদ করছে। মুখে একটাই কথা, ‘‘বাবা, ঠাকুমা খুব খারাপ।’’

কাটোয়ার আবাসনপাড়ার মা-হারা সাড়ে ছ’বছরের ইন্দ্রজিৎকে কিছুতেই সামলাতে পারছিলেন না দিদিমা-দাদু। মেয়েকে খুন করার অভিযোগে জামাই আর তার মা-কে পুলিশ ধরেছে শোনার পর থেকে নাতির সুরক্ষাটাই একমাত্র চিন্তা বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের গঙ্গারামপুরের ওই বৃদ্ধ দম্পতির। সঙ্গে আফশোস, ‘‘জামাইকে বিশ্বাস করে বড্ড ঠকে গেলাম আমরা!’’

বছর আঠাশের মহুয়া ঘোষের দেহ পুলিশ পেয়েছিল ১৯ জুলাই, বুধবার। তবে অ্যাসিডে বিকৃত মুখ দেখে চেনা যায়নি তাঁকে। মহুয়াদেবীর শাশুড়ি ছবিরানি ঘোষের ফোন পেয়ে তাঁর খোঁজ শুরু করেন পড়শিরা। মহুয়াদেবীর স্বামী উজ্জ্বলভাস্কর ঘোষের কথায় তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই শিক্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে ‘সুপারি কিলার’ লাগিয়ে মহুয়াকে খুনের কথা স্বীকার করেন উজ্জ্বল। শনিবার মহুয়ার বাবা সরোজাক্ষ পাল মেয়েকে খুনের অভিযোগ করেন জামাই, মেয়ের শাশুড়ি ছবিরানি ও শ্বশুরবাড়ির তরফের দুই আত্মীয়ের নামে। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘স্বামী ও শাশুড়িকে ধরা হয়েছে। এই খুনের পিছনে আরও কে-কে রয়েছে, খোঁজ চলছে।’’

কী ভাবে স্ত্রীকে খুন করিয়ে বেমালুম সব চেপে রেখেছিলেন ইতিহাসের ওই শিক্ষক, সে আলোচনাতেই এ দিন সরগরম ছিল আবাসনপাড়া এলাকা। সহকর্মী উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে হতবাক দাঁইহাটের চরপাতাইহাট হাইস্কুলের অন্য শিক্ষকেরাও। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মিনাজউদ্দিন বলেন, ‘‘বরাবরই কম মেলামেশা করতেন উনি। এমন ঘটনার পরেও দু’দিন স্কুলে এসেছেন। দেখে কিছুই বুঝিনি আমরা।’’ তবে বছর পাঁচেক আগে স্ত্রীর সঙ্গে উজ্জ্বলের ঝামেলা কোর্টে গড়িয়েছিল বলে জানেন কেউ কেউ।

মহুয়াদেবীর মা মিনতিদেবী জানান, দাম্পত্য অশান্তির জেরে ২০১১ সালে সদ্যোজাত ছেলেকে নিয়ে মহুয়া বাপেরবাড়ি চলে আসেন। উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করা হয়। সেই মামলাতেই জেল খাটেন উজ্জ্বল। তবে পরে মীমাংসা হতে কাটোয়া ফেরেন মহুয়াদেবী।
কিন্তু ততদিনে যে তাঁকে খুনের ছক কষা হয়ে গিয়েছে, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ।

কাটোয়ায় উজ্জ্বলের পড়শি জয়দেব সাহা, সুভাষচন্দ্র দাসেরা জানান, ওই শিক্ষক এলাকায় তেমন মিশতেন না। শুক্রবার ছবিরানির ফোনে মহুয়া নিখোঁজ জেনে অবাকই হন তাঁরা। পড়শিদের দাবি, উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই তাঁরা বোঝেন, মহুয়ার নিখোঁজ হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকতা আছে। এ দিন অনেক পড়শিকেই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘বউটিকে মেরে যারা ভান করছিল, সেই মা-ছেলের ফাঁসি চাই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Mahua Ghosh মহুয়া ঘোষ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE