চন্দ্রকুমার বসু
সংগঠনের জোরে কিছু করে ওঠার আশা নেই। তারকাদের হাতড়ে বাংলায় জ্বলে উঠতে চাইছে বিজেপি! তার সঙ্গে ভরসা সুভাষচন্দ্র বসুকে ঘিরে বাঙালির আবেগ।
আজ সন্ধেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দলের বৈঠকের আগেই বেনজির ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও প্রাক্তন টিভি-তারকা স্মৃতি ইরানিকে দিয়ে দল ঘোষণা করল, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভবানীপুর কেন্দ্রে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্য চন্দ্রকুমার বসুকে প্রার্থী করছে বিজেপি।’’ যা শুনে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘নেতাজি পরিবারের সদস্যরা তো তৃণমূলেও আছেন।’’ নেতাজি সংক্রান্ত ফাইল প্রকাশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের টক্কর চলছে আগে থেকেই। এ বার ভোটের ময়দানেও ‘নেতাজি’র উত্তরাধিকারকে অস্ত্র করতে চাইল মোদীর দল। তৃণমূল দলীয় ভাবে বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
এ দিন ৫২টি কেন্দ্রে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দল। অভিনেতা লকেট চট্টোপাধ্যায়কে ময়ূরেশ্বরে, প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড় ষষ্ঠী দুলেকে ধনেখালিতে ও সিউড়িতে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থ়ী করা হয়েছে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও বিবেচনা হয়েছে। কিন্তু তাঁর আসন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে প্রার্থী করা নিয়েও দলে আলোচনা চলছে। কিন্তু আগের বারের মতোই এ বারও বিষয়টি দানা পাকেনি।
কেন্দ্রের শাসক দলকে বাংলার জন্য কেন এ ভাবে তারকা-সন্ধানে নামতে হল? দলীয় সূত্রেই বলা হচ্ছে, একটু নড়বড়ে হলেও পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিত এখনও যথেষ্ট মজবুত। আর বিরোধী পরিসরটির দখল নেওয়ার যে সুযোগ বছরখানেক আগে তৈরি হয়েছিল, এখন তার রেশটুকুও নেই। কংগ্রেস-বামে জোটের বাজারে বিজেপির পরিসর কমে গিয়েছে আরও। ফলে রাজ্যে এখন বিজেপির সংগঠনের যা হাল, তাতে প্রধান বিরোধী দল হয়ে ওঠার আশা রাখছেন না দলের নেতারাই। দলে এমন কোনও মুখ নেই, যিনি দলকে সেই উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। শেষ বাজারে হাওয়া তুলতে ফের তাই তারকাই ভরসা।
হাওড়ায় এক সভায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার। এ দিন তাঁর আসন নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দলের এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, দিল্লির ভোটে শেষ বাজারে কিরণ বেদীকে এনে দলের মুখ করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গেও সে ধরনেরই একটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। দল আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হবে না পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু চন্দ্রকুমার বসুকে সামনে রেখে এবং তাঁর নাম বেনজির ভাবে ঘোষণা করে বিজেপি নেতৃত্ব আজ বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই বিজেপির অঘোষিত মুখ। গত জানুয়ারি মাসে হাওড়ায় অমিত শাহের সভায় গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন চন্দ্রকুমার।
কী বলছেন চন্দ্রকুমার? দিল্লিতে তিনি আজ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পরিবর্তনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু আসল পরিবর্থন হল কি? এ তো বামেদের ৩৪ বছরেরই সম্প্রসারণ। রাজ্যে কোনও উন্নয়ন হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। শিক্ষার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সব দিক থেকেই রাজ্যের আরও ক্ষতি হয়েছে।’’ নেতাজি পরিবারেরই সদস্য ও তৃণমূলের সাংসদ সুগত বসু বলেন, ‘‘চন্দ্রকুমার বসু বিজেপির প্রার্থী হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয় হবে।’’
বিজেপি নেতারা আজ দার্জিলিঙের ৩টি আসনে লড়ার জন্য মোর্চার নেতাদেরও দিল্লিতে ডেকে পাঠান। বিজেপি চায়, তাদের প্রতীকেই মোর্চার নেতারা প্রার্থী হন। বিজেপি পুরো তালিকা ঘোষণা করতে পারে ১৫ মার্চের পরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy