Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গুহামানবের স্মৃতিমাখা লালজল অনাদরেই

জঙ্গলমহলের পর্যটন মানচিত্রে অবহেলিত লালজল। শীতে দলে দলে লোক পিকনিক করতে আসেন। তবু দু’কিলোমিটার পাহা়ড়ি রাস্তার হাল ফেরেনি।

দুর্গম: লালজলের রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

দুর্গম: লালজলের রাস্তা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৫৩
Share: Save:

ছোট ছোট পাহাড়ের ঢালে ছবির মতো গ্রাম লালজল। পাশেই ঝরনা, লোহা আর তামার মিশেলে জল তার লালচে। তাই গ্রামের এমন নাম। বেলপাহাড়ির ওই গ্রামে রয়েছে প্রাকৃতিক গুহা। বিভিন্ন প্রস্তর যুগের একাধিক প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন মিলেছে সেখানে। সে সব ঠাঁই পেয়েছে ভারতীয় জাদুঘর ও দিল্লির জওহরলাল নেহরু মিউজিয়ামে।

অথচ, জঙ্গলমহলের পর্যটন মানচিত্রে অবহেলিত লালজল। শীতে দলে দলে লোক পিকনিক করতে আসেন। তবু দু’কিলোমিটার পাহা়ড়ি রাস্তার হাল ফেরেনি।

এ নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভের শেষ নেই। যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাঁদেরও প্রশ্ন— যেখানে জঙ্গলমহলের পর্যটন প্রসারে নানা পদক্ষেপের কথা বলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ট্যুরিজম সার্কিট গড়ার পরিকল্পনা হয়, সেখানে মাত্র দু’কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয় না কেন!

বেলপাহাড়ি থেকে বাঁশপাহাড়ি যাওয়ার পথে প্রায় ১৯ কিলোমিটার রাস্তা ঝকঝকে পিচের। তারপর লালজল মোড়। সেখান থেকে ডান দিকে ঘুরলেই লাল কাঁকুড়ে-মাটির রাস্তায় চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২ কিলোমিটার এগোলে লালজল। এই দু’কিলোমিটারেই যন্ত্রণার সফর। স্থানীয়রা জানালেন, সরকারিস্তরে কাঁচা রাস্তাটি কংক্রিটের ঢালাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। গত বর্ষায় রাস্তা আরও খারাপ হয়েছে। বড় গাড়ি ঢোকা দায়। স্থানীয় বংশীবদন মাহাতো, অজয় মাহাতো, সুবল মাহাতোরা বলেন, ‘‘রাস্তা পাকা করতে বহুবার প্রশাসনে আবেদন করা হয়েছে। তবে লাভ হয়নি।

প্রশাসন সূত্রের অবশ্য দাবি, দু’কিলোমিটার পাহাড়ি রাস্তাটি পিচ করতে কোটি টাকার বেশি খরচ। এক লপ্তে এত টাকা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই আপাতত বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির তরফে মোরাম-বোল্ডার দিয়ে রাস্তা সংস্কারের জন্য পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে। লালজলের আকর্ষণ হল— পশ্চিমে দেওপাহাড়ের প্রাকৃতিক গুহা, দক্ষিণ-পূর্বে সিংলহর পাহাড়ের শ্রেণি আর উত্তরে রানিপাহাড়। প্রাচীন সভ্যতার সাক্ষী অপরূপ নিসর্গের এলাকাটি অনায়াসেই হতে পারত অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র। ঝাড়গ্রামের লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানালেন, ওই গুহার বিভিন্ন স্তরে আদি, মধ্য ও নব্যপ্রস্তর যুগের, এমনকী তাম্র ও লৌহ যুগের নিদর্শনও মিলেছিল। এখানেই পাওয়া গিয়েছে পাথরের লাঙল, নীল গাইয়ের হাড়ের ফসিল, পাথরের তিরের ফলা, ত্রিভুজাকৃতি চপার, তামার কুঠার। সত্তর ও আশির দশকে টানা ১২ বছর ধরে লালজলে ক্ষেত্র সমীক্ষা করেছিলেন রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন প্রত্নবস্তু সহায়ক বিশ্বনাথ সামন্ত।

স্থানীয়রা জানালেন, ষাটের দশকে লালজলের গুহায় চিতাবাঘও ছিল। জনশ্রুতি, বাঘের সঙ্গে থাকতেন সন্ন্যাসী রামস্বরূপ। ১৯৮৩ সালে রামস্বরূপ লালজলে বাসন্তী পুজোর পত্তন করেন। এখনও বাসন্তী পুজোয় পাঁচ দিনের মেলা বসে। এলাকাবাসীর আক্ষেপ, এমন একটি এলাকায় যোগাযোগের রাস্তাটাই হল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE