Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
নয়ের দশকে গতি কমে গিয়েছিল মাকুর, দুর্দিনের শুরু হয়েছিল তখন থেকেই

তাঁত ভুলে ফের স্বপ্ন বুনছে চর মাজদিয়া

কয়েক দশক আগেও গ্রামের তাঁত-চিত্রটা ছিল চেনা। মাকু চলার খটাখট শব্দে গভীর রাত পর্যন্ত মুখর হয়ে থাকত গোটা তল্লাট। নতুন কাপড়ের গন্ধে ভারী হয়ে থাকত বাতাস।

পেশা-বদল: মাজদিয়ার এক তাঁত কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।

পেশা-বদল: মাজদিয়ার এক তাঁত কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ০০:৫১
Share: Save:

কয়েক দশক আগেও গ্রামের তাঁত-চিত্রটা ছিল চেনা।

মাকু চলার খটাখট শব্দে গভীর রাত পর্যন্ত মুখর হয়ে থাকত গোটা তল্লাট। নতুন কাপড়ের গন্ধে ভারী হয়ে থাকত বাতাস। গ্রামের কয়েক হাজার পরিবারের প্রধান জীবিকা ছিল তাঁতের কাপড় বোনা। নবদ্বীপের গঙ্গা পার হয়ে স্বরূপগঞ্জ ঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের গ্রাম চরমাজদিয়ায় এখন সে সবই অতীত।

দশ হাজারেরও বেশি তাঁত ছিল ওই পঞ্চায়েত এলাকায়। গত তিন দশকে একটু একটু করে ধ্বংস হয়েছে তাঁত শিল্প। তিন পুরুষের তাঁতি বাধ্য হয়ে তাঁত বোনা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন রিকশা, লটারি টিকিট বিক্রি কিংবা রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ। পরিত্যক্ত তাঁতঘরে বাসা বেঁধেছে সাপখোপ।

এমন দুরবস্থার মধ্যে নয়ের দশকে গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন গ্রামের বহু যুবক। শিবশঙ্কর দেবনাথ তাঁদেরই একজন। দিল্লিতে বেশ কয়েক বছর এক হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করে ফিরে আসেন নিজের গ্রামে। ২০১১ সালে বাড়িতে ছোট একটি হোসিয়ারি কারখানা চালু করেন। প্রায় একই সময়ে গ্রামের আরও দুই যুবক, পঙ্কজ দেবনাথ ও গৌতম দেবনাথও একই পথে হাঁটেন।

সেই শুরু। চরমাজদিয়া পেয়ে গেল নতুন জীবিকার সন্ধান। হাওড়ার সালকিয়ায় বিভিন্ন হোসিয়ারি কারখানাতেও এই গ্রামের অনেকে কাজ করতেন। তাঁরাও বিষয়টি জানতে পেরে উৎসাহিত হন। গ্রামে গড়ে উঠতে থাকে একের পর এক হোসিয়ারি কারখানা। সব মিলিয়ে চরমাজদিয়া-চরব্রহ্মনগরে এখন পঞ্চাশটি কারখানা।

একসময় নিজেও তাঁতশিল্পী ছিলেন চরমাজদিয়ার বাসিন্দা তথা আইএনটিটিইউসি-র নবদ্বীপ ব্লক সভাপতি অমূল্য দেবনাথ। তিনি জানান, নয়ের দশক থেকে তাঁতের দুর্দিনের শুরু। তারপর তিনটে দশক ধরে কেবলই ক্ষয় হয়েছে নবদ্বীপের অর্থনীতির একসময়ের প্রধান স্তম্ভটির। কিন্তু বছর পাঁচেক ধরে হোসিয়ারির হাত ধরে ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চরমাজদিয়া চরব্রহ্মনগর।

এক কারখানা মালিক অলোক দেবনাথ জানাচ্ছেন, পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদেরও এখানে কাজের সুযোগ রয়েছে। একটা কারখানা সব মিলিয়ে প্রায় বারোটি পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারছে। এই মুহূর্তে হোসিয়ারি দ্রব্যের বাজারও ভাল। তবে আর্থিক কারণেই সব কাজ জানা সত্ত্বেও তাঁরা এখনও পর্যন্ত কেবল ছোটদের জিনিসই তৈরি করছেন।

কারখানার মালিকদের দাবি, তাঁরা যেটুকু করেছেন সবটাই নিজেদের উদ্যোগে। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে চরমাজদিয়ার চেহারাটাই বদলে যাবে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌরাঙ্গ দত্ত বলছেন, ‘‘ওঁরা যাতে ঋণ পেতে পারেন সে ব্যাপারে আমরাও চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Weavers Majhdia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE