Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নবান্নের কাছেই এ বার নব নবান্ন

ঠাঁই না-থাকায় বাম আমলে কিছু দফতরকে মহাকরণ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাদের জায়গা হয় কলকাতা, সল্টলেক ও নিউ টাউনে। পালাবদলের পরে মহাকরণ সংস্কারে হাত দেন মমতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৯:৫০
Share: Save:

এক ছাদের তলায় না-হোক, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব দফতরকেই এ বার কাছাকাছি আনতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মহাকরণ থেকে নবান্নে ঠাঁইবদলের পর্বে স্থানাভাবে বেশ কিছু দফতরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাদের জায়গা দিতে নবান্নের কাছেই গড়ে উঠবে নতুন ভবন। অর্থাৎ নব নবান্ন। এই নতুন পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আপাতত মহাকরণে না-ফিরে নবান্নে থেকেই যেতে চাইছে সরকার।

ঠাঁই না-থাকায় বাম আমলে কিছু দফতরকে মহাকরণ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাদের জায়গা হয় কলকাতা, সল্টলেক ও নিউ টাউনে। পালাবদলের পরে মহাকরণ সংস্কারে হাত দেন মমতা। তার জেরে বছর পাঁচেক আগে রাজ্য সরকারের সদর সরে যায় নবান্নে। কিন্তু সেখানে সব দফতরের জায়গা হয়নি। এখন সেই দফতরগুলিকেই নবান্নের কাছে আনতে চান মুখ্যমন্ত্রী। লক্ষ্য মূলত দু’টি: সময় বাঁচানো। অর্থ বাঁচানো।

নবান্নের লাগোয়া জমিতেই গড়ে উঠবে নতুন ভবন। পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডেকে নিয়ে সোমবার সেই জমি ঘুরে দেখেন মুখ্যসচিব মলয় দে। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন ভবন গড়ে তোলার বিষয়টি প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। পূর্ত দফতরকে নকশা তৈরি করতে বলা হয়েছে। সেটি হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, নবান্ন থেকে মন্দিরতলার দিকে এগোলে ডান হাতে একটি রাস্তা চলে গিয়েছে মিনিবাস স্ট্যান্ডের দিকে। তারই উল্টো দিকে ওই খাস জমিতে এখন গাড়ি থাকে। কার্যত ‘পার্কিং লট’ হিসেবেই ব্যবহৃত হয় সেটি। এ ছাড়াও হাওড়া পুরসভার জঞ্জাল ফেলার বহু টানা গাড়ি লাট করে রাখা আছে সেখানে।

১৪তলা নবান্ন ভবনে এখন মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এবং মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র অফিস ছাড়া অর্থ, প্রশাসনিক সংস্কার, সংখ্যালঘু উন্নয়ন, কৃষি, পূর্ত ও তথ্য-সংস্কৃতির মতো কয়েকটি দফতর রয়েছে। বাকি প্রায় সব দফতর ছড়িয়ে আছে অন্যত্র। কিন্তু প্রশাসনিক কাজের স্বার্থে সব দফতরের মন্ত্রী-অফিসার-কর্মীদের প্রায় প্রতিদিনই নবান্নে আসতে হয়। এতে গাড়ির প্রচুর তেল পোড়ে। সময়ও লেগে যায় অনেকটা। ‘‘ফাইল বগলদাবা করে অর্থ দফতরে হাজিরা দিতে গিয়ে প্রায় সারা দিন নবান্নেই কেটে যায়,’’ বলছেন অনেক সরকারি কর্মী।

নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রকগুলি অনেক স্বাধীন ভাবে কাজ করে। মন্ত্রকের সচিবেরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু রাজ্যে অধিকাংশ ফাইলেই অনুমোদন লাগে মুখ্যসচিবের। তাই নবান্ন না-ছুঁয়ে উপায় নেই।’’ কাজের সুবিধে আর খরচ বাঁচানোর জন্যই নব নবান্ন তৈরির উদ্যোগ। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সরকারের আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ভাড়া বাড়ি থেকে সরকারি অফিস তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও পুরনো। দফতরগুলিকে কাছাকাছি আনতে নবান্নের পাশে জমির খোঁজ চলছিল। জমি মিলেছে, তাই শুরু হয়েছে তৎপরতা।’’

তবে যে-জমির কথা ভাবা হচ্ছে, সেখানে নবান্নের মতো উঁচু ভবন তৈরির সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবু জমির তুলনায় যাতে আকাশ বেশি ব্যবহার করা যায়, পূর্ত দফতরকে তেমনই নকশা করতে বলা হয়েছে। এতে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট, অদূর ভবিষ্যতে মহাকরণে রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বাসনা এখনই নেই সরকারের।

‘‘সংস্কার শেষ হতে আরও বছর তিনেক লাগবে। মহাকরণ হয়তো ‘হেরিটেজ ভবন’ হিসেবেই থেকে যাবে,’’ বলছেন এক সরকারি কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE