Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিলেই বয়স কমিয়ে নথি জাল

• আদতে বয়স তার ২২। কিন্তু ভুয়ো শংসাপত্র পেশ করে ১৭ বছর বলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।• কারও বয়স আবার ১৯ বছর। কিন্তু জাল নথি পেশ করে বেমালুম বনে গিয়েছে ১৫ বছরের নাবালক!

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

• আদতে বয়স তার ২২। কিন্তু ভুয়ো শংসাপত্র পেশ করে ১৭ বছর বলে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।

• কারও বয়স আবার ১৯ বছর। কিন্তু জাল নথি পেশ করে বেমালুম বনে গিয়েছে ১৫ বছরের নাবালক!

জাল নোটের কারবারে এই ধরনের কয়েক জন ‘কমবয়সি’-কে গ্রেফতার করে ভুয়ো নথি তৈরির এক সংগঠিত চক্রের সন্ধান পেয়েছেন গোয়েন্দারা। চক্রটি মূলত মালদহের কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরেই সক্রিয় রয়েছে বলে জেনেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট যুবক-তরুণদের বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে মোটা টাকা নিচ্ছে চক্রটি। নাসির শেখের বাবা মুজফ্ফর শেখ এমনই এক জন। তিনি এনআইএ-কে জানিয়েছেন, ছেলের বয়স ১৮ বছরের কম দেখিয়ে একটি হাইমাদ্রাসা থেকে ভুয়ো শংসাপত্র বার করতে চার লক্ষ টাকা নিয়েছিল ওই চক্রের লোকজন! জমি বেচে, গয়না বন্ধক দিয়ে তিনি টাকা জোগাড় করেন বলে জানান মুজফ্‌ফর।

জাল নোটের কারবারে নাবালক শংসাপত্রের দরকার হচ্ছে কেন?

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, নাসিরের মতো সদ্য-তরুণেরা বেশ কিছু দিন ধরে জাল নোটের কারবারে জড়িত। তাদের মধ্যে কেউ ধরা পড়লে চক্র থেকে টোপ দেওয়া হচ্ছে বাড়ির লোকেদের। বলা হচ্ছে, ছেলের বয়স কমিয়ে দেওয়ার শংসাপত্র জোগাড় করে দেবে তারা। এতে ধরা পড়লেও তাকে থানা বা জেলে যেতে হবে না, জেরার মুখে পড়তে হবে না। ঠাঁই হবে হোমে। কারণ, সে তো ‘নাবালক’!

আরও পড়ুন:গ্যাংগ্রিন সারাল জেলা হাসপাতালই

এই শংসাপত্র হাতে থাকলে জামিনে মুক্তি পেতেও সুবিধে হবে বলে বোঝাচ্ছে চক্রের লোকজন। ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই টোপ গিলছেন বাবা-মায়েরা। তার পরে ঘটিবাটি বিক্রি করে কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে শংসাপত্র পাচ্ছেন হাতে। কিন্তু তাতেও যে শেষরক্ষা হচ্ছে না, নাসিরের ঘটনাই তার প্রমাণ।

জাল নোটের কারবারে গত বছর মার্চে ধরা পড়ে বৈষ্ণবনগরের মহম্মদপুর গ্রামের নাসির। তার বয়স ভাঁড়ানোর প্রমাণ পেয়েছে কলকাতার জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড। মঙ্গলবার বোর্ড নাসিরকে প্রাপ্তবয়স্ক বলে ঘোষণা করার পরে বুধবার তাকে কলকাতার এনআইএ আদালতে হাজির করানো হয়। এনআইএ-র কৌঁসুলি দেবাশিস মল্লিক চৌধুরী জানান, অভিযুক্তকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক শুভ্রা ঘোষ।

বয়স ভাঁড়ানোর একই ধরনের প্রমাণ মিলেছিল ২০১৫-র মে-তে। তখন প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকার জাল নোট-সহ ধরা পড়ে বৈষ্ণবনগরেরই দৌলতপুর গ্রামের বরকত আলি। একটি শংসাপত্র পেশ করে জানানো হয়, বরকতের বয়স ১৫ বছর।

পরে এনআইএ-র তদন্তে জানা যায়, বরকতের বয়স তখন ছিল ১৯ বছর। গোয়েন্দারা দেখেন, বরকতের নামে জাল শংসাপত্র দিয়েছে একটি স্কুল। সেই স্কুল আবার শংসাপত্রটি দিয়েছিল একটি বেসরকারি কোচিং সেন্টারের ভুয়ো ট্রান্সফার সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে। বরকতের পরিবারের কাছ থেকে চক্রটি কত টাকা নিয়েছিল, তার খোঁজ চলছে।

নাসির শেখকে নাবালক প্রতিপন্ন করতে গত বছর এপ্রিলে শাম মহম্মদ হাইমাদ্রাসার শংসাপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু গোয়েন্দারা জেনেছেন, ওই নামে মাদ্রাসার অস্তিত্ব তখন ছিলই না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE