Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর পুরস্কার দরকার নেই, আমলাদের ফরমান মমতার

প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের দৌড়ে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন রাজ্যের প্রথম সারির দুই আইএএস অফিসার। সে কথা জানতে পেরে একেবারেই খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের কোনও অফিসার ওই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

পি বি সেলিম ও সৌমিত্র মোহন

পি বি সেলিম ও সৌমিত্র মোহন

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৪:৩২
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের দৌড়ে নাম নথিভুক্ত করেছিলেন রাজ্যের প্রথম সারির দুই আইএএস অফিসার। সে কথা জানতে পেরে একেবারেই খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের কোনও অফিসার ওই পুরস্কারের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা দেখানোর জন্য ‘প্রাইম মিনিস্টার্স অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সেলেন্স ইন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ নামে একটি পুরস্কার চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে আবেদন করেছিলেন বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি বি সেলিম। কিন্তু মমতা বলে দিয়েছেন, এ রাজ্যে কর্মরত আইএএস অফিসারদের কাজ নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর শংসাপত্র দরকার নেই। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের জন্য রাজ্যের কোনও আমলা যেন আবেদন না করেন।

নোট বাতিলের প্রতিবাদে নরেন্দ্র মোদীকে গদি থেকে সরিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন মমতা। মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে দিল্লি-কলকাতা-লখনউ দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। মঙ্গলবার লখনউয়ে সভা করার পরে আজ, বুধবার পটনাতে তাঁর সভা করার কথা। এরই মধ্যে রাজ্যের আমলাদেরও প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার এড়িয়ে চলার ফরমান জারি করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন, মোদী যত দিন গদিতে, প্রধানমন্ত্রীর পদটিও তত দিন তাঁর কাছে কার্যত ব্রাত্য।

মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশে আমলা মহলের একাংশ যদিও বিস্মিত! তাঁদের বক্তব্য, এই পুরস্কার কোনও ব্যক্তির নামে নয়, প্রধানমন্ত্রীর পদের নামে। তাই কাজের স্বীকৃতি হিসাবে এই পুরস্কার অবশ্যই বিশেষ মর্যাদা দাবি করে। অন্য দিকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ওই আমলারা কার হয়ে কাজ করছেন— নরেন্দ্র মোদী, নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

নবান্নের খবর, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পুরস্কার চালু হওয়ার ই-মেল পেয়ে দুই জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এবং পি বি সেলিম প্রার্থী হিসাবে অনলাইনে নাম নথিভুক্ত করেন। তাঁরা যে প্রতিযোগিতায় সামিল হতে নাম নথিভুক্ত করেছেন, সে কথা নবান্নের শীর্ষ স্তরেও জানান। আর তাতেই আগুনে ঘি পড়ে।

সরকারি সূত্রের খবর, মোদীর পুরস্কারের জন্য তাঁর দুই জেলাশাসক সরাসরি আবেদন করেছেন জেনে চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। পত্রপাঠ বলে দেন, এ রাজ্যের আমলাদের কাজকর্ম নিয়ে মোদীর সার্টিফিকেটের দরকার নেই। মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তা সব আইএএস অফিসারদের জানিয়েও দিয়েছে কর্মিবর্গ প্রশাসনিক সংস্কার দফতর।

ক্ষমতায় আসার পরের বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে এই পুরস্কার চালু করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। গত দু’বছরেও (’১৫ এবং ’১৬) রাজ্যের কয়েক জন আমলা আবেদন করেছিলেন। তার মধ্যে সেলিমও ছিলেন। কিন্তু কারও ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। এ বার সৌমিত্র মোহন এবং ফের পি বি সেলিম আবেদন করেছেন ২০১৭ সালের জন্য। প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা জানান, ২০১৭ সালের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতর যে ই-মেল পাঠিয়েছে, তাতে জেলাস্তরে কৃষি-সেচ, ফসল বিমা, গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন, স্টার্ট আপ এবং ই-গভর্ন্যান্স— এই পাঁচটি বিষয়ে প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরই প্রার্থীদের কাজের মূল্যায়ন করবে এবং তার ভিত্তিতেই জেলাশাসকেরা সেরার শিরোপা পাবেন।

প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্য প্রশাসনের আগাম অনুমতি না নিয়ে কেন ওই দুই আমলা নিজেদের নাম পাঠালেন। এই নিয়ে সেলিম এবং সৌমিত্র মোহনমন্তব্য করতে না চাইলেও প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার চালু হয়েছে প্রায় দু’বছর। ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যাবে না বলে সরকারের তরফে নির্দেশ ছিল না। তা ছাড়া, আগের বছরেও যখন কেউ কেউ আবেদন করেন, তখন আপত্তি ওঠেনি। মুখ্যমন্ত্রীর ফরমান জারির আগে যাঁরা ভেবেছিলেন আবেদন করবেন, তাঁদের কয়েক জনের কথায়, ‘‘কৃষি কর্মন, ১০০ দিনের কাজ ও নির্মল জেলা ঘোষণার ক্ষেত্রে অতীতে কেন্দ্রের থেকে পুরস্কার পেয়েছে রাজ্য। সে কথা আমরা গর্বের সঙ্গে প্রচারও করেছি। তাই অনেকে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের জন্য নাম নথিভুক্ত করার কথা ভেবেছিলাম।’’

নবান্নের একাংশের বক্তব্য, সরকারি স্তরে বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত শুরু হয়েছে অনেক দিন। যেমন, বাম সরকারের আমলের ঋণ মকুবের দাবি আজও মানেনি কেন্দ্র। আবার, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাতিল অথবা তার টাকা কমিয়ে দেওয়া নিয়েও বারেবারে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি ১০০ দিনের কাজের টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র, তা নিয়ে বিরোধ আরও চড়া হয়েছে। তার পরে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত তাকে পৌঁছে দিয়েছে চরমে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের আমলারা পুরস্কারের জন্য আবেদন করবেন, এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE