Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদী-ডেরা পালানো মেয়ে মাধ্যমিকে সফল

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুকুরমণির বাবা শ্রীকান্ত সোরেন ক্ষুদ্র চাষি। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আশপাশের অনেকের মতোই পেট ভরে খেতে পাওয়ার আশায় মাওবাদীদের রানিবাঁধ স্কোয়াডে ঢুকেছিল সে।

সফল: সুকুরমণি সোরেন। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

সফল: সুকুরমণি সোরেন। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৭ ১৪:০০
Share: Save:

আগ্নেয়াস্ত্র হাতে জঙ্গলে ঘোরা সাথীদের সঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো অন্ধকারেই হারিয়ে যেত সে। কিন্তু ঠিক সময়ে পুলিশই তাকে উদ্ধার করে এনে আলোর পথ দেখায়। এগারো বছর বয়সে (বর্তমানে আঠারো) মাওবাদীদের স্কোয়াডে ঢুকে পড়া রানিবাঁধের বাগডুবি গ্রামের সেই মেয়ে সুকুরমণি সোরেন হোম থেকে মাধ্যমিক দিয়ে সফল হওয়ায় খুশি বাঁকুড়ার পুলিশ কর্মীরা। তার সাফল্যকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতী জেলার পুলিশ কর্মীদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে এক মঞ্চেই রবিবার সংবর্ধনা দেওয়া হল সুকুরমণিকেও। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “এক সময় দারিদ্রের কারণে মাওবাদী স্কোয়াডে যাওয়া মেয়েটির সঠিক পথে ফেরার ঘটনা অনেককে উদ্ধুদ্ধ করবে।”

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সুকুরমণির বাবা শ্রীকান্ত সোরেন ক্ষুদ্র চাষি। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। আশপাশের অনেকের মতোই পেট ভরে খেতে পাওয়ার আশায় মাওবাদীদের রানিবাঁধ স্কোয়াডে ঢুকেছিল সে। তবে বেশিদিন সেখানে থাকতে পারেনি। তার কথায়, “দিন সাতেকের মতো স্কোয়াডে ছিলাম। আমাকে ল্যান্ডমাইন ভরা টিফিন বক্স বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।” কিন্তু ২০১০-এর ৮ নভেম্বর রানিবাঁধের লোদরা জঙ্গলে মাওবাদী-পুলিশের গুলির লড়াইয়ে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখা মেয়েটির বুক কেঁপে ওঠে। ভয়ে বাড়ি পালিয়েছিল সে। ততদিনে পুলিশের খাতায় নাম উঠেছিল তার। খবর পেয়ে পুলিশই তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

সেই থেকে বাঁকুড়ার কেঠারডাঙায় বেসরকারি হোমের আবাসিক সে। জঙ্গল-জীবনের আতঙ্ক কাটিয়ে সে বাঁকুড়ার সরমা সুন্দরী পাল স্মৃতি বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করে মাধ্যমিকে ২২৭ পেয়ে পাশ করেছে। বারিকুল ও রানিবাঁধ থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের
করা কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। তবে সুকুরমণি আরও পড়তে চায়। মেয়েকে দেখতে হোমে আসেন বাবা-মা। সুকুরমণিও পুলিশি ঘেরাটোপে বাড়ি যায়। এ দিনের অনুষ্ঠানে মধ্যমণি ছিল সে-ই। হোমে ফেরার পথে সুকুরমণি বলে, ‘‘তখন পুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে না আনলে আজ কোথায় থাকতাম, জানি না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE