Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসারে জিতে ঘরে-বাইরে লড়তে হবে কেন

ক্যানসারকে জয় করে যাঁরা বেচে থাকেন, তাঁদের ‘কোয়ালিটি অব লাইফ’ অর্থাৎ জীবনযাত্রার মান নিয়ে আলোচনা খুব বেশি হয় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:৩২
Share: Save:

সব দেশেই যুদ্ধ জয় করে ফেরা সৈনিকেরা আজীবন বীরের সম্মান, বিশেষ সম্ভ্রম পেয়ে থাকেন।

কিন্তু ক্যানসারের মতো করাল শত্রুর সঙ্গে লড়ে যাঁরা টিকে থাকেন, তাঁদের কপালে কি সেই সম্ভ্রম-সম্মান জোটে? স্বীকৃতি পায় কি তাঁদের একান্ত সংগ্রাম? রোগটা যাতে বাড়তে না-পারে, তার জন্য কেমোথেরাপি, অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে চলে প্রাণপণ চেষ্টা। কিন্তু তার পরে? রোগী যদি বেঁচেও যান, কেমন হয় তাঁর পরবর্তী জীবনটা? পরিবারে ও সমাজে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কি আগের মতোই থাকে? কতটা চিড় খায় তাঁর আত্মবিশ্বাস? রোগমুক্ত জীবনেও টিকে থাকার জন্য ঘরে-বাইরে কতটা লড়তে হয় তাঁকে? মরণপণ যুদ্ধে রোগকে হারিয়ে ফের তাঁকে লড়তেই বা হবে কেন?

ক্যানসারকে জয় করে যাঁরা বেচে থাকেন, তাঁদের ‘কোয়ালিটি অব লাইফ’ অর্থাৎ জীবনযাত্রার মান নিয়ে আলোচনা খুব বেশি হয় না। বিদেশে বিষয়টি কিছুটা গুরুত্ব পেলেও এ দেশে ক্যানসার রোগীদের পরবর্তী জীবনের লড়াইটা উপেক্ষিতই থেকে গিয়েছে। তাই ক্যানসারজয়ীদের জীবন নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমীক্ষা শুরু করছে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট অব ক্যানসার (ইওআরটিসি)। বিদেশের বিভিন্ন ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্রে এই সমীক্ষা হবে। এ দেশে একমাত্র কলকাতার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসার পরে সেই মানুষদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়েছে কি না, শরীরে বিকৃতি এসেছে কি না, অবসাদ তৈরি হয়েছে কি না, সমাজে তাঁদের জায়গাটা আগের মতো রয়েছে কি না, এমনকী তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক রোগের কারণে চিড় খেয়েছে কি না— দেখা হবে সবই।

এই প্রকল্পে থাকছেন ইওআরটিসি-র ‘কোয়ালিটি অব লাইফ গ্রুপ’-এর একমাত্র ভারতীয় সদস্য, কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক মানস চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, আগে ক্যানসার চিকিৎসার সময়ে বাঁচার সম্ভাব্য মেয়াদ মাপা হতো। রোগীকে শারীরিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখতে গিয়ে তাঁর বেঁচে থাকার মান কতটা নষ্ট হচ্ছে, এটাও মাপা এখন জরুরি। ‘‘এটা মাপার কোনও সূচক নেই। কারণ বিষয়গুলি বিক্ষিপ্ত। সারা বিশ্বে এটা মাপার জন্য গবেষণা শুরু করেছে ইওআরটিসি। ভারত-সহ ১৯টি দেশে চলছে এই কাজ,’’ বললেন মানসবাবু।

ওই চিকিৎসক জানান, এক বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ চলবে। তার পরে সব তথ্যপঞ্জি আমস্টারডামে একটি ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্রে পাঠানো হবে। সেখানে যাবতীয় তথ্য বিশ্লেষণের পরে ক্যানসার-পরবর্তী জীবনের মান কী ভাবে আরও উন্নত করা যায়, তৈরি হবে তার রূপরেখা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনের মান যথাযথ রাখতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা দরকার, সচেতনতা দরকার ডাক্তারদেরও। কেননা তাঁরা চিকিৎসার সময়ে শুধু শরীরের ভাল-মন্দের দিকটাই খেয়াল রাখেন। কোন চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঠিক কতটা, কোন চিকিৎসার জেরে পরবর্তী সময়ে কী কী হতে পারে, সেই সব জরুরি বিষয় উপেক্ষিতই থেকে যায়।

ঠিক কী ভাবে হচ্ছে এই সমীক্ষা?

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রের খবর, এখন যাঁদের চিকিৎসা চলছে এবং যাঁদের চিকিৎসা বেশ কিছু দিন আগে শেষ হয়েছে, এই দু’ধরনের মানুষকেই সমীক্ষার আওতায় রাখা হচ্ছে। কী কী বিষয় জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁদের কাছে? সমীক্ষকেরা কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন, ক্যানসার সেরে যাওয়ার পরে শারীরিক সক্ষমতা কি আগের মতো রয়েছে? কর্মক্ষেত্রে কি আগের মতো গুরুত্ব পান? কেমোথেরাপির জেরে চুল উঠে যাওয়ায় যে-অবসাদ আসে, সেটাই বা কাটিয়ে ওঠেন কী ভাবে? স্তন, ডিম্বাশয় বা জরায়ুতে ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পরে দাম্পত্য সম্পর্কে কোনও বদল এসেছে কি? ক্যানসারের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে জমি-বাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে কি? সন্তানদের লেখাপড়া বা বিয়ের ক্ষেত্রে কি কোনও সমস্যা দেখা দিয়েছে?

‘‘বাঁচতে সকলেই চায়। কিন্তু সেই বাঁচাটা যেন বাঁচার মতো হয়। এখন ক্যানসারের অনেক আধুনিক চিকিৎসা বেরিয়েছে। ওই রোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষ অনেক বেশি দিন বাঁচছেন। তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে সংলগ্ন রাখার জন্য ভাবনাচিন্তা দরকার,’’ বললেন আরজি কর হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। আরজি করে এই প্রকল্পে সুবীরবাবুর সঙ্গে থাকছেন চিকিৎসক অঞ্জন অধিকারীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer ক্যানসার
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE