ফাইল চিত্র।
সরকারি হাসপাতালে যে সব এনএস-১ পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই ডেঙ্গি নির্ণায়ক আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সরকারি চিকিৎসকদেরই। দেগঙ্গা, অশোকনগর বা কলকাতা— রাজ্যের বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে জ্বরের রোগীদের এনএস১ পরীক্ষা করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে চিকিৎসকদের একাংশ দাবি করছেন। যাঁরা জ্বরে ভর্তি আছেন তাঁদের বেশির ভাগের ক্ষেত্রে ছেড়ে দেওয়ার আগে ওই পরীক্ষা হচ্ছে না বা হলেও রোগীর পরিবার সেই রিপোর্ট হাতে পাচ্ছেন না।
সরকারি চিকিৎসকদের একটি বড় অংশের অভিযোগ— শুধু এনএস১ পজিটিভ হওয়ার অর্থ ডেঙ্গি সংক্রমণের আশঙ্কা। ডেঙ্গি হয়েছে কি না নিশ্চিত হতে গেলে আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষা করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকাতেও সে কথাই বলা আছে। কিন্তু এখানে সঠিক সময়ে ওই ডেঙ্গি নির্ণায়ক পরীক্ষা না হওয়ায় রোগটা ডেঙ্গি না অন্য কিছু, সেটা ধরা পড়ছে না। এর ফলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে রাখা গেলেও অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিভ্রাট ঘটে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে।
কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘আমার অধীনে সম্প্রতি যত জ্বরের রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই আইজিএম/আইজিজি পরীক্ষা হয়নি। কারণ শুধু এনএস১ পজিটিভ হলে ডেঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হয় না। এই কারণেই আমাদের এনএস১-এ থেমে থাকার কথা বলা হচ্ছে।’’ আবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘কখনও কিট থাকছে না। কখনও পরীক্ষার রিপোর্ট এত দেরিতে আসছে যে তার আগে হয় রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন, নয়তো তাঁর মৃত্যু হচ্ছে। তাই প্রকৃত চিত্রটা জানা যাচ্ছে না।’’
প্রেসক্রিপশন বা ডেথ সার্টিফিকেটে ডেঙ্গি না লিখে ‘ফেব্রাইল ইলনেস’ লেখা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সে নিয়ে খোদ চিকিৎসক মহল থেকেই অভিযোগ ওঠায় এখন এনএস১ পজিটিভ লেখা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা অংশ মানছেন, ‘‘এতে সাপও মরছে। আবার লাঠিও ভাঙছে না।’’ স্বাস্থ্য দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘জ্বর নিয়ে রোগী এলে প্রথমে এনএস১, কিছু দিন পরে আইজিএম, আইজিজি পরীক্ষা হচ্ছে। যাঁরা বলছেন হচ্ছে না, তাঁরা মিথ্যা বলছেন।’’
কিন্তু জ্বর নিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন ভর্তি থেকে মারা যাওয়ার পরেও বহু রোগীর ডেথ সার্টিফিকেটে শুধু এনএস১–এর কথাই লেখা থাকছে। যদি তাঁদের আইজিএম কিংবা আইজিজি পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভই কবে, তা হলে কেন সেই কাগজপত্র পরিবারের লোকেরা হাতে পাচ্ছেন না? স্বাস্থ্য ভবন সেই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy