Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বেতনে-বৈষম্যে ক্ষুব্ধ পিএ মহল

একই পরীক্ষা দিয়ে চাকরি মিলেছে। কাজকর্মও বিশেষ আলাদা নয়। কিন্তু বেতনক্রমে বিস্তর ফারাক। সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহলেই।

অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share: Save:

একই পরীক্ষা দিয়ে চাকরি মিলেছে। কাজকর্মও বিশেষ আলাদা নয়। কিন্তু বেতনক্রমে বিস্তর ফারাক। সেই ব্যবধান আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। যা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরমহলেই।

সমস্যাটা দেখা দিয়েছে রাজ্যের পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিএ) বা ব্যক্তিগত সহায়ক পদের চাকরিতে। এ রাজ্যে পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ই রয়েছে অর্থ দফতরের আওতায়। ওই পদের দু’টি তালিকা। ‘শেডিউল এ’ এবং ‘শেডিউল বি’। যে-সব পিএ সাধারণ ভাবে শেডিউল এ-র অন্তর্ভুক্ত, তাঁরা থাকেন রাজ্য সচিবালয়ে। ‘শেডিউল বি’-র ব্যক্তিগত সহায়কদের কর্মস্থল হয় সরকারি ডিরেক্টরেট বা জেলায়।

নবান্ন সূত্রের খবর, ১৯৮৯ থেকে দুই শেডিউলের পদে নিয়োগের জন্য একই সঙ্গে পরীক্ষা নেয় পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা পিএসসি। সেই পরীক্ষায় সফলদের তালিকায় উপরের দিকে থাকা আবেদনকারীরা যোগ দেন সচিবালয়ে। অন্যেরা ডিরেক্টরেট বা জেলায়। উপরের দিকে থাকা কোনও আবেদনকারী চাইলে অবশ্য ডিরেক্টরেট বা জেলাতেও কাজে যোগ দিতে পারেন।

এত দিন পর্যন্ত শেডিউল এ-র সঙ্গে শেডিউল বি-র বেতনক্রমে পার্থক্য ছিল একটি স্কেল বা ধাপের। সচিবালয়ের ব্যক্তিগত সহায়কেরা সর্বোচ্চ বেতনক্রম পেতেন পূর্বতন স্কেল ১৭ এবং অন্যেরা পেতেন স্কেল ১৬ অনুযায়ী। কিন্তু অর্থ দফতর সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, শেডিউল এ-তে থাকা পিএ-দের সর্বোচ্চ বেতনক্রম হবে পূর্বতন স্কেল ১৯ পর্যন্ত। যা যুগ্মসচিবদের সমতুল। স্বভাবতই অন্য পিএ-দের সঙ্গে বেতনের ফারাকটা বেড়ে হয়েছে তিনটি স্কেল বা ধাপের। প্রশাসনের অন্দরে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ফারাকের এই আয়তন বৃদ্ধি নিয়েই।

এর আগে ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের ক্ষেত্রেও শুধু ‘গ্রুপ এ’-র বেতনে বাড়তি সুযোগ-সবিধা দিয়েছে বর্তমান রাজ্য সরকার। অথচ ডব্লিউবিসিএসের অন্য গ্রুপে সে-ভাবে বেতনক্রমে বৃদ্ধির কোনও সুবিধাই মেলেনি। এই নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে। এ বার ক্ষোভ তৈরি হল পিএ-দের মধ্যেও। নবান্নের এক কর্তার কথায়, বিসিএসের ক্ষেত্রে গ্রুপ এ-কেই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে সরকার। সেই জন্য সুযোগ-সুবিধার বেশিটাই পান ওই পদের অফিসারেরা। ‘‘একই ভাবে সচিবালয়ে থাকার কারণে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কাজ সামাল দিতে হয় মন্ত্রী বা সচিবদের পিএ-কে। তাই সুবিধাও তাঁরাই বেশি পাচ্ছেন,’’ বলেন ওই নবান্ন-কর্তা।

শেডিউল এ-র পিএ সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট পিএ অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতারা অবশ্য এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিভাস ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে আমাদের প্রতি বঞ্চনা ছিল। এই সরকারের আমলে বরং সেই বঞ্চনার অনেকটাই সুরাহা হল। কারণ, সচিবালয়ে অন্য পদে যাঁরা চাকরিতে ঢোকেন, তাঁরা অনেক সুবিধা পান। কিন্তু এত দিন আমরা তা পেতাম না। এখন পাচ্ছি।’’

প্রাপ্তির পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে শেডিউল বি-র সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট পিএ অ্যাসোসিয়েশন শেডিউল বি’। তাদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘সচিবালয়ে এমন অনেক পিএ আছেন, যাঁদের দিয়ে শেডিউল এ-র কাজ করানো হয়। তা সত্ত্বেও তাঁরা বেতন কম পান। আমাদের কাজও তো কম নয়! তা হলে বেতনের এমন ফারাক কেন? আমরা শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দরবার করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salary Discrimination Personal Assistants PA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE