ডেনডুক ছেরিং শেরপাকে দেখতে গেলেন পর্যটনমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র
যেন বিদ্যুতের শক এসে লাগল হাতে! সারা শরীর কেঁপে উঠল। তাকিয়ে দেখেন বাঁ হাত দিয়ে রক্ত ঝরছে। মুহূর্তে সংজ্ঞা হারান। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির নার্সিংহোমের শয্যায় শুয়ে বোন লাকপা ডোমাকে দেখে কথাগুলি বলছিলেন কালিম্পং থানার জখম পুলিশ কর্মী ডেনডুক ছেরিং শেরপা। চোখে তখনও আতঙ্কের চিহ্ন। হাত, পা, পেটের কাছে, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বোমার অংশ তখনও ঢুকে রয়েছে। বাঁ হাতটার অস্তিত্বটাই বুঝতে পারছেন না। ওই হাতের রক্ত নালিকা, মাংস বোমার আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসক এ দিন রাতে অস্ত্রোপচার করেন।
স্মৃতিতে জেগে উঠছে, শনিবার রাত তখন দশটা। থানা ঢোকার মুখে টহল দিচ্ছিলেন হোমগার্ড ডেনডুক এবং কয়েকজন সহকর্মী। এমনিতেই পাহাড়ে রাত নামলেই তাড়াতাড়ি সব বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যে বন্ধ পরিস্থিতিতে চার পাশটা আরও নিঝুম। শয্যাশায়ী ডেনডুক বলছিলেন, ‘‘আচমকা কিছু একটা উড়ে এসে থানার কোনও কিছুতে লাগতেই প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ। নিমেষেই বাঁ হাতে যেন বিদ্যুতের কয়েকশো ভোল্টের শক দিল কেউ। হাতটা গরম হয়ে উঠেছে। শরীর কাঁপছে। হাতটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আর কিছু ভাবার মতো পরিস্থিতি ছিল না।’’ লুটিয়ে পড়েন। থানা চত্বরে তখন গোলমাল। পরে তাঁকে উদ্ধার করে নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হয়। বোন লাকপা ডোমা বলেন, ‘‘অন্তত ২০ বছর ধরে দাদা পুলিশে চাকরি করছেন। কখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এদিন যেটুকু ওঁর মুখ থেকে শুনলাম তাতে রাতে থানায় টহল দেওয়ার সময় ঘটনা। বারবার বলছিল কিছু বোঝার আগেই ওর হাতে যেন বিদ্যুতের জোরাল শক লাগে। শরীর কেঁপে ওঠে। ওই ভয়ঙ্কর স্মৃতি ভুলতে পারছেন না।’’
আরও পড়ুন: মেয়েটির সারা শরীর ভেসে যাচ্ছিল রক্তে
রাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকেই ডেনডুকবাবু জখম হওয়ার খবর পান পরিবারের লোকেরা। দলপচাঁদের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, মা, এবং দুই কিশোরী মেয়ে তেনজিং এবং সোনম রয়েছে। দুই দাদা তাসিদর্জি ভুটিয়া এবং টিএন ভুটিয়া কাছেই আলাদা থাকেন। বোন লাকপা সিকিমের রুমটেকে থাকেন। উদ্বিগ্ন সকলে শিলিগুড়িতে চলে এসেছেন।
এ দিন নার্সিংহোমে ডেনডুককে দেখতে যান পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলেন। সমস্ত সাহায্যের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের কাপুরুষিত বর্বরোচিত আক্রমণ যারাই করেছে কঠোর শাস্তি হবে। পাহাড়ের বাসিন্দাদের উপর হামলা হচ্ছে। এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। ডেনডুকবাবুর হাতের পরিস্থিতি ভাল নয়। প্লাস্টিক সার্জারির দরকার হবে।’’ এদিন নার্সিংহোমে তাঁকে দেখতে আসেন কৃষ্ণ রসাইলি মতো কালিম্পং থানার পুলিশ কর্মীরা অনেকেই। কৃষ্ণবাবু জানান, ঘটনার সময় তিনি লাগোয়া জেলাশাসকের অফিসে কর্মরত ছিলেন। শব্দ শুনে এসে দেখেন কয়েকজন সহকর্মী লুটিয়ে রয়েছে। হামলার পর থেকে সকলেই চিন্তায়।
পর্যটনমন্ত্রীর কথায়, ‘‘পরপর বিস্ফোরণ হামলার প্রকৃতি বিপজ্জনক। তদন্ত করে কারা যুক্ত, কারা এর পিছনে আছে বার করা হবে। ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।কাদের সঙ্গে মোর্চার যোগ রয়েছে দেখা হচ্ছে। বিস্ফোরক বাইরে থেকে এসেছে। এর পিছনে অনেক বড় মাথা রয়েছে। এসব তাদের চক্রান্ত। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন। সেগুলো সামনে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy