Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পার্থের ভর্ৎসনার মুখে ছাত্রনেতারা

এই অবস্থায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে খোদ উপাচার্যের আহত হওয়ার ঘটনায় ছাত্র সংসদের নেতানেত্রীদের তিরস্কার করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশও দিলেন সংশ্লিষ্ট সকলকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

হাজারো চেষ্টা সত্ত্বেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র গোষ্ঠী-কোন্দলে রাশ টানা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে খোদ উপাচার্যের আহত হওয়ার ঘটনায় ছাত্র সংসদের নেতানেত্রীদের তিরস্কার করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশও দিলেন সংশ্লিষ্ট সকলকে।

মঙ্গলবার তৃণমূল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ১৪ জন সদস্যের সঙ্গে এক বৈঠকে মন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে শিক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক মারামারি হয়। অভিযোগ, মারধর করা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তীকেও। সেই সময়েই দু’দলের ধাক্কাধাক্কিতে গুরুতর আহত হন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সহ-উপাচার্য (অর্থ) মীনাক্ষী রায়। এ দিনও উপাচার্য শয্যাশায়ী ছিলেন বলে খবর। সংঘর্ষের দিনেই কয়েক জন পড়ুয়া লগ্নজিতাদের বিরুদ্ধে জোড়াসাঁকো থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, তাঁদের বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেনজির এই ঘটনায় শিক্ষা শিবিরে তোলপাড় চলছে।

পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠায় ছাত্রনেতাদের ভর্ৎসনা আর হুঁশিয়ার করে দেওয়ার পথ নেন মন্ত্রী। নির্দেশ দেন, তাঁকে না-জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে মিটিং-মিছিল করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যা চলছে, তাতে ছাত্র শাখার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারেই কিছু পড়ুয়ার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছিলেন উপাচার্য। কিন্তু দফতরের
এক শীর্ষ কর্তা পুলিশে অভিযোগ না-করার পরামর্শ দেন। পরে উপাচার্য বলেন, ‘‘এই ধরনের সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি না-হওয়াই ভাল।’’

তার পরেই মঙ্গলবার ছাত্র শাখার দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্থবাবু এ দিন ছাত্র সংসদের সদস্যদের সতর্ক করে দেন কড়া ভাষায়। বিবদমান দুই গোষ্ঠীকে মেলানোর জন্য পার্থবাবু বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগী হয়েছেন। কিন্তু সমস্যা যে মেটেনি, এ দিন মন্ত্রীর তরফে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে নিজের দলের ছাত্রনেতাদের তিরস্কারের ঘটনাই তার প্রমাণ। বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট কোর্সে পড়াশোনার নামে অনেকের দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।

এর আগে ছাত্র শাখার নেতাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা-র সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু পাল-সহ কিছু শিক্ষক। অস্থায়ী উপাচার্যের পদে বসেই সুগত মারজিৎ নিজে উদ্যোগী হয়ে সেই শিক্ষকদের কাছে ছাত্রনেতাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করিয়েছিলেন। এ বারের ছাত্র-সংঘর্ষে উপাচার্য আহত হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রীও সংশ্লিষ্ট ছাত্রদের ক্ষমা চাওয়ানোর উপরেই জোর দিচ্ছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে একই সঙ্গে হাতিয়ার করছেন তিরস্কার আর হুঁশিয়ারিকে।

শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, নিজের দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে ছাত্র সংসদ থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রী তাদের রাশ ধরতে পারছেন না কেন? দীর্ঘদিন ধরে লাগাতার গোষ্ঠী-কোন্দল চলছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি-তে। নানা সময়ে তর্জনগর্জন করেও মন্ত্রী তার সুরাহা করতে পারেননি। তাই এ বার তিরস্কার বা ক্ষমাপ্রার্থনার নির্দেশে কতটা কী কাজ হবে, আদৌ হবে কি না— তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষাজগৎ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE