Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কে সুনসান শিলিগুড়ি

শুক্রবার সন্ধেয় গয়নার শোরুমে ডাকাতির চেষ্টা রুখে দিয়েছিলেন পথচারীরাই। গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়তে থাকা দুষ্কৃতীদের আটকাতেও ভয় পায়নি শিলিগুড়ি। ভরসন্ধেয় হিলকার্ট রোডের এমন ঘটনার স্মৃতি এ দিনও বারবার বাসিন্দাদের সামনে আসছে। সেই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

বাজেয়াপ্ত: ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

বাজেয়াপ্ত: ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি। নিজস্ব চিত্র

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

চব্বিশ ঘণ্টা কেটেছে। তবু ‘শ্যুটআউটে’র আতঙ্ক ভুলতে পারছে না শিলিগুড়ি। সন্ধ্যের পর হিলকার্ট রোডের ধারে আড্ডায় ভিড় তুলনামূলক কম। দোতলার গয়নার শো-রুমের ঝাঁপ বন্ধ। তোড়ে বৃষ্টিতে সুনসান হয়ে যায় হিলকার্ট রোড। শনিবার পুলিশের বেশ কয়েকটি টহলদারি ভ্যানও হিলকার্ট রোডে ঘুরেছে।

শুক্রবার সন্ধেয় গয়নার শোরুমে ডাকাতির চেষ্টা রুখে দিয়েছিলেন পথচারীরাই। গুলি ছুড়তে ছুড়তে দৌড়তে থাকা দুষ্কৃতীদের আটকাতেও ভয় পায়নি শিলিগুড়ি। ভরসন্ধেয় হিলকার্ট রোডের এমন ঘটনার স্মৃতি এ দিনও বারবার বাসিন্দাদের সামনে আসছে। সেই সঙ্গে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। শুক্রবার সন্ধেয় হিলকার্ট রোডের টহলদারি ভ্যানের ভূমিকা নিয়েও ব্যবসায়ীদের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে।

এ দিন সকালে সোনার দোকানটিতে তদন্তে যান পুলিশ অফিসারেরা। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বয়ানও নেওয়া হয়। তবে দোকানটি খোলেনি। এ দিন দুপুরে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির সঙ্গে পুজো নিয়ে পুলিশের বৈঠকে হয়েছে। সেখানে পুলিশ কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন। ব্যবসায়ীরা পুলিশের নজরদারি ছাড়াও ভ্যানের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলেছেন। হিলকার্ট রোড ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সনৎ ভৌমিক বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। আমরা কমিশনারকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। উনি আশ্বস্ত করেছেন।’’

বাণিজ্য শহর শিলিগুড়ি। এমন ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে ব্যবসা-বাণিজ্যেও, আশঙ্কা বণিকমহলের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সচিব বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র শিলিগুড়ি। পথচারীরা যে ভাবে বুক চিতিয়ে দুষ্কৃতীদের রুখে দিয়েছেন সেটাই আশার আলো। পুলিশ প্রশাসনকে আমাদের দাবি জানিয়েছি।’’ সেবক রোড এবং বিধান রোডের ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দাদের মধ্যেও ঘটনার পরে আতঙ্ক ছড়ায়।

ঘটনার কথা বলতে গিয়ে এ দিনও শিউরে উঠলেন এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলর নান্টু পাল। হিলকার্ট রোডে গুলি চলছে শুনেই ভেনাস মোড়ে গিয়েছিলেন তিনি। নান্টুবাবু বলেন, ‘‘দেখলাম পথচারীরা কেউ প্রাণভয়ে ছুটছেন কেউ বা দুষ্কৃতীদের পেছনে দৌড়চ্ছেন। রাস্তায় পড়ে থাকা বন্দুক, রাইফেল কুড়িয়ে আনছে পুলিশ। সে এক ভয়াবহ দৃশ্য। আশা করব শিলিগুড়িতে এমন দৃশ্য আর দেখতে হবে না।’’

আতঙ্কের সঙ্গে মাথা তুলেছে বাসিন্দাদের নিরাপত্তার প্রশ্নও। শুধু আলোচনায় নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠে আসে। এ দিন সকালে দোকান খুলতে খুলতে ফুটপাথের ব্যবসায়ী গোপাল বর্মন বলেন, ‘‘এমনিতে পাহাড় বন্ধ। ব্যবসা কম। সন্ধেয় যা গোলাগুলি দেখেছি, তাতে ভয়ও লাগছিল। বাসিন্দারাই তো ধরে দিলেন তিন জনকে।’’ চা বিক্রেতা অনিল রায়, নিতাই দাসেরা একযোগে জানান, ভয় থাকলেও দরকারে সকলে মিলে চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীদের ঠেকানো যায় সেটা বোঝা গিয়েছে। তবে হকার থেকে স্থায়ী দোকান মালিক সকলেই জানিয়েছেন, পুলিশি নজরজদারি বাড়াতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE