Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র ভর্তির টাকা নিয়ে জয়ার সামনেই গ্রেফতার

টাকার বিনিময়ে কলেজে ভর্তি করানোর যে ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠেছিল, সোমবার দুপুরে সেই ঘটনা চাক্ষুষ করলেন জয়া নিজেই। ঘটনাটি শুনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘আমি তো বারবারই বলছি টাকা চাইলে পড়ুয়ারা কেন টাকা দিচ্ছেন?’’

ধৃত: অভিযুক্ত সৌরভ সোনকারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। তৎপর জয়া দত্ত। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ধৃত: অভিযুক্ত সৌরভ সোনকারকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। তৎপর জয়া দত্ত। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:১২
Share: Save:

ফুটপাথে দাঁড়িয়ে তিন ছাত্রী এবং এক মহিলা। এক জন মোবাইলে কাউকে বলছেন, ‘‘তাড়াতাড়ি চলে আয়। টাকা দিতে এসে গিয়েছে।’’

পাশের গলি থেকে নীল রঙের জামা পরে চলে এলেন এক যুবক। মহিলা ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বার করে ওই যুবকের হাতে দিলেন। তখনই চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হল তাঁদের। চায়ের দোকানের পাশ থেকে আঙুল উঁচিয়ে বেরিয়ে এলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী জয়া দত্ত এবং তাঁর দলবল। চিৎকার করে জয়া বলতে থাকেন, ‘‘ধর ওকে। আমার সামনেই টাকা নিয়েছে!’’

টাকার বিনিময়ে কলেজে ভর্তি করানোর যে ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠেছিল, সোমবার দুপুরে সেই ঘটনা চাক্ষুষ করলেন জয়া নিজেই। ঘটনাটি শুনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, ‘‘আমি তো বারবারই বলছি টাকা চাইলে পড়ুয়ারা কেন টাকা দিচ্ছেন?’’

ঘটনাস্থল শ্যামবাজারের মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের কিছু দূরে। জয়ার চেঁচামেচিতে দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসে শ্যামপুকুর থানার পুলিশ। জয়া তাঁদের বলতে থাকেন, ‘‘ধরুন একে। কলেজে ভর্তি করানোর জন্য টাকা নিচ্ছিল।’’ ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। যুবকের জুতো খুলে পড়ে যায় রাস্তায়। টেনেহিঁচড়ে যুবককে তোলা হয় পুলিশের গাড়িতে। নিয়ে যাওয়া হয় শ্যামপুকুর থানায়। রাস্তায় তখন লোক দাঁড়িয়ে গিয়েছে। থমকে গিয়েছে বাস ও গাড়ি। সকলেই বলছেন, ‘‘এদের জন্য ছেলেমেয়েদের কলেজে ভর্তি করানো
যায় না।’’

আরও পড়ুন:ফের মেয়ে! মা-ই ফেললেন জঙ্গলে

জানা গেল, ওই যুবকের নাম সৌরভ সোনকার ওরফে বুড়ো।

কী ভাবে ঘটল সব? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দমদম এলাকার এক ছাত্রীর অভিযোগ, তিনি ৭৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে মণীন্দ্র কলেজে ইংরেজি অনার্সে ভর্তি হতে যান। মেধাতালিকার অনেক পিছনে নাম ছিল। তখন তাঁর থেকে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল ইউনিয়নের তরফে। টাকা দিতে না-পারায় ভর্তি হতে পারেননি। এর পরে এক প্রতিবেশী মারফত যোগাযোগ হয় কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে। অভিযোগকারিণীর দাবি, মণীন্দ্র কলেজের ওই ছাত্রীই ফোনে পরিচয় করান সৌরভের সঙ্গে। ১৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ক্ষুদিরাম কলেজে ভর্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ফর্ম পূরণের জন্য দাবি করা হয় পাঁচ হাজার টাকা।

এ দিকে গত সপ্তাহে অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে যান ওই ছাত্রী। কিন্তু সৌরভ ও মণীন্দ্র কলেজের ছাত্রীটি ফর্মপূরণের পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এ দিন সেই টাকাই দিতে এসেছিলেন তাঁরা।

অভিযোগকারিণী জানান, তিনি বিভ্রান্ত হয়ে টাকার ফাঁদে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। আর কোনও পড়ুয়াকে যাতে টাকার জন্য চাপ না-দেওয়া হয়, সেটাই চান। জয়া পরে দাবি করেন, ‘‘সৌরভ নিজের জন্য টাকা চায়নি।
পাঁচ হাজার টাকা খরচ করে সে মণীন্দ্র কলেজে ফর্ম পূরণ করেছিল। বটতলা থানা এলাকার বাসিন্দা সুরজ সিংহ নামে এক যুবককে টাকা দেওয়ার কথা ছিল তার।’’ বটতলা থানায় সৌরভ এ ব্যাপারে সুরজের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE