নেওয়ার্ক বিমানবন্দরের রানওয়ে ছেড়ে ৩০০ জন যাত্রী এবং ১৫ জন কর্মীকে নিয়ে সবে ডানা মেলেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং-৭৭৭। মাটি থেকে সে যখন মাত্র ১০০ ফুট উপরে, তখনই উঁচু কন্ট্রোল টাওয়ারে বসা অফিসার দেখতে পান, বিমানের বাঁ দিকের ইঞ্জিনে আগুন লেগে গিয়েছে। পাইলট তখনও ককপিটে কোনও বিপদ-সঙ্কেত পাননি। কন্ট্রোলারের সাবধানবাণী পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেমে আসে বিমানটি। রক্ষা পায় ৩১৫টি প্রাণ। সেটা ২০১৪ সালের ১৩ জুলাইয়ের ঘটনা।
কলকাতা বিমানবন্দরে শতাধিক মিটার উঁচু কন্ট্রোল টাওয়ার তৈরির কথা ঘোষণা করেও পরে কম উচ্চতার টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেছেন কলকাতার প্রাক্তন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) অফিসার দেবাশিস ভট্টাচার্য। তিনি মামলার আবেদনে নেওয়ার্কের ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, কন্ট্রোল টাওয়ার যত উঁচু হবে, সেখানে বসে অফিসার তত স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই যুক্তিতেই কলকাতায় ১১২ মিটার উঁচু
টাওয়ার চান এখানকার অফিসারেরাও। কিন্তু তাঁদের দাবি নস্যাৎ করে ইতিমধ্যেই কলকাতা বিমানবন্দরের পাঁচ নম্বর গেটের পাশে মাত্র ৫৭ মিটার উঁচু টাওয়ার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (আরইডি) কুন্দনলাল শর্মা বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও মামলা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তা ছাড়া নতুন টাওয়ারের নির্মাণ তো শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ দেবাশিসবাবু জানাচ্ছেন, গত জুলাইয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ওই জনস্বার্থ মামলা দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত তার শুনানি হয়নি।
দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, ২০১৩ সালে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, টাওয়ার হবে ৮৬ মিটার উঁচু। ২০১৬-র ১০ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষের নিজস্ব পত্রিকায় বলা হয়, ভারতের সর্বোচ্চ টাওয়ারটি হবে কলকাতায় এবং সেটির উচ্চতা হবে ১১২ মিটার। দিল্লিতে যে-টাওয়ার রয়েছে, সেটি ১০১.৯ মিটার উঁচু। মুম্বইয়ে টাওয়ারের উচ্চতা ৮৩.৮ মিটার। কলকাতা সর্বোচ্চ টাওয়ার পাচ্ছে জেনে যারপরনাই খুশি হয়েছিলেন অফিসারেরা। তাঁদের বক্তব্য, টাওয়ার উঁচু হলে সেখান থেকে চার পাশ অনেক পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়। বিমানের নামা বা ওঠার সময়ে তার আশেপাশে কিছু ঘটছে কি না, এমনকী রানওয়ে বা তার কাছাকাছি সেই সময়ে কী ধরনের যানবাহন ঘোরাফেরা করছে, সবটাই নজরে আসে কন্ট্রোলারের।
কিন্তু কলকাতার অফিসারদের সর্বোচ্চ টাওয়ারের আশা অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়ে। অভিযোগ, ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আচমকাই দরপত্র ডেকে বলা হয়, কলকাতায় ৫৭ মিটার উঁচু টাওয়ার হবে। কর্তৃপক্ষের যুক্তি, টাওয়ারের উচ্চতা তার চেয়ে বেশি হলে রাজারহাটের দিক থেকে দ্বিতীয় রানওয়েতে বিমান নামার সময়ে সমস্যা হবে। প্রধান রানওয়ের দু’পাশে এবং দ্বিতীয় রানওয়ের বিরাটির দিকে বিমান নামাতে সাহায্যকারী যন্ত্র আছে। শুধু দ্বিতীয় রানওয়ের রাজারহাটের দিকে নেই। সমস্যা হবে সেই জন্যই।
প্রতিবাদে নামেন অফিসারেরা। এটিসি অফিসারদের সংগঠন গিল্ডের পূর্ব ভারতের সম্পাদক কৈলাসপতি মণ্ডল আরইডি-কে চিঠি দিয়ে জানান, তাঁরা খতিয়ে দেখেছেন, ১১২ মিটার টাওয়ার হলে কোনও অসুবিধা হবে না। তাঁদের যুক্তি, যে-সময়ে প্রধান রানওয়ে বন্ধ থাকে এবং দ্বিতীয় রানওয়ের বিরাটির দিকে নামার জন্য বাতাস অন্তরায় হয়ে ওঠে, তখনই দ্বিতীয় রানওয়ের রাজারহাটের দিক দিয়ে বিমান নামার প্রয়োজন পড়ে। দৃশ্যমানতা ২০০০ মিটার থাকলে টাওয়ারের উচ্চতা ১১২ মিটার হলেও কোনও সমস্যা হবে না।
কিন্তু অফিসারদের যুক্তি ধোপে টেকেনি। এখন হাইকোর্টের দিকে চেয়ে বসে আছেন তাঁরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy