হাতকাটা নাসিরুল্লা। —নিজস্ব চিত্র।
সেটা ১৯৯৯। তখনও জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) বলে কোনও জঙ্গি সংগঠনের নাম পশ্চিমবঙ্গে চাউর হয়নি। মুর্শিদাবাদের লালগোলা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে এক বাংলাদেশি যুবক ওই সংগঠনের হয়ে গোপনে প্রচার শুরু করে। তার ডান হাত কব্জির নীচে থেকে কাটা। কিছু দিনের মধ্যে লালগোলার মকিমনগরে ঘাঁটি তৈরি করে ওই যুবক। তার পর সংগঠন গড়ে করিমপুরের মতো নদিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়। বোমা বানানোর তালিম সে-ই প্রথম দেয় এই রাজ্যে জেএমবি-র সদস্যদের।
সোহেল মেহফুজ ওরফে হাতকাটা নাসিরুল্লা নামে ওই বাংলাদেশি যুবক পশ্চিমবঙ্গে জেএমবি-র স্থপতি বলে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানাচ্ছে। রাজ্যে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত এই নাসিরুল্লাকে গ্রেফতার করার কথা শনিবার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। শনিবার এই জঙ্গিকে সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির করে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের জঙ্গি দমন শাখার প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘২০০৬-এ সে ভারতে পালিয়ে যায়। ২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সে জেএমবি-র ভারতীয় শাখার প্রধান ছিল।’’ মনিরুল জানান, ২০১৪-র ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে ডিসেম্বরে সে ফের বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। পরে নব্য জেএমবি-তে যোগ দিয়ে সংগঠনের উত্তরাঞ্চলের আমির হয়।
আরও পড়ুন: বাদুড়িয়া নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন রাজ্যের
কী করে গ্রেফতার হল সোহেল ওরফে নাসিরুল্লা?
বাংলাদেশ পুলিশের দাবি, শুক্রবার চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে একটি আমবাগানে বৈঠক করতে এসে জালে পড়ে সচরাচর প্রকাশ্যে না-আসা নাসিরুল্লা। হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পরে পলাতক চার জঙ্গি নেতার এক জন সে। সেই হামলার অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ তারই জোগাড় করা।
তবে অনেকের ধারণা, দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশ পুলিশ সোহেল ওরফে নাসিরুল্লাকে আটক করেছে। বাংলাদেশে নাসিরুল্লা ধরা পড়ে থাকতে পারে বলে ২ জুলাই আনন্দবাজারে খবর প্রকাশিত হয়।
এনআইএ-র বক্তব্য, খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের দিন নাসিরুল্লা ছিল বেলডাঙায়। তার অদূরেই সে এই রাজ্যে জেএমবি-র বিস্ফোরক ও বোমার প্রথম কারখানাটি তৈরি করে। পরে তা খাগড়াগড়ে সরানো হয়। বিস্ফোরণে নিহত শাকিল গাজি ছিল বোমা তৈরির অন্যতম কারিগর। নাসিরুল্লার কাছেই সে ‘কাজ’ শেখে।
খাগড়াগড় মামলার বিচার ১৩ জুলাই কলকাতার এনআইএ আদালতে ফের শুরু হওয়ার কথা। এ দিন এনআইএ-র এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে আমাদের একটি দল ঢাকা যাবে।’’ নাসিরুল্লার নামে ১০ লক্ষ টাকা ইনাম ঘোষণা করেছিল এনআইএ।
নাসিরুল্লাকে নিয়ে খাগড়াগড় মামলায় ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬। অভিযুক্তের সংখ্যা ৩৪। তবে বাংলাদেশে এ-ই প্রথম কোনও অভিযুক্ত ধরা পড়ল। এনআইএ-র এক অফিসার বলেন, ‘‘নাসিরুল্লা বাংলাদেশে ধরা পড়ায় ও দেশের সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগ প্রতিষ্ঠিত হল।’’
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, নাসিরুল্লা জেএমবি-র একটি সাইবার সেল গড়ার পরিকল্পনা নেয় মুর্শিদাবাদের উমরপুরে। এমসিএ, কম্পিউটার সায়েন্সে বি টেক ও এম টেক ডিগ্রিধারী কয়েক জন যুবককে সে জোগাড়ও করে। কিছু ল্যাপটপও জোগাড় করা হয়। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় স্টার প্রাপকদের আনন্দরাম বরুয়া পুরস্কার হিসেবে ল্যাপটপ দেয় অসম সরকার। সেই ল্যাপটপেরই কয়েকটি উমরপুরে আনা হয়। তবে পরিকল্পনা কার্যকর করার আগেই খাগড়াগড়ের ঘটনায় সব বন্ধ হয়ে যায়।
গোয়েন্দাদের কথায়, এক সময়ে নাসিরুল্লা মনে করে, জেএমবি-তে সে প্রাপ্য সম্মান পায়নি। তাকে সরিয়ে মাসুদ রানাকে পশ্চিমবঙ্গের ‘আমির’ বা প্রধান করা হয়। সংগঠনে তার পরে আসা সালাউদ্দিন সালেহিন, কওসর ওরফে বোমা মিজানরা বেশি গুরুত্ব পেতে থাকে। তাই, জেএমবি ছেড়ে সে যোগ দেয় নব্য জেএমবি বা আইএসের বাংলাদেশ শাখায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy