Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতায় বেপরোয়া পুলিশ, হাওড়ায় সংযমী শুধু শুরুতে

কলকাতা পুলিশ এলাকায় এ দিন সব চেয়ে বেশি লোক হয়েছিল এজেসি বোস রোড এবং বিদ্যাসাগর সেতুর সংযোগস্থলে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা, দক্ষিণ শহরতলি এবং পার্ক সার্কাস থেকে বাম সমর্থকেরা এসে প্রথমে জমায়েত করেন কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের কাছাকাছি এলাকায়।

ফোরশোর রোডের দৃশ্য। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

ফোরশোর রোডের দৃশ্য। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০৪:০১
Share: Save:

এজেসি বোস রোড - বিদ্যাসাগর সেতু

কলকাতা পুলিশ এলাকায় এ দিন সব চেয়ে বেশি লোক হয়েছিল এজেসি বোস রোড এবং বিদ্যাসাগর সেতুর সংযোগস্থলে। দক্ষিণ ২৪ পরগণা, দক্ষিণ শহরতলি এবং পার্ক সার্কাস থেকে বাম সমর্থকেরা এসে প্রথমে জমায়েত করেন কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের কাছাকাছি এলাকায়। সেখান থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর এজেসি বসু রোডের হাওড়ামুখী র‌্যাম্প ধরে নবান্নের দিকে রওনা দেন আন্দোলনকারীরা। টার্ফ ভিউ-এর কিছু দুরেই ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা আটকানো দেখে থমকে যান বিক্ষোভকারীরা। জনা তিরিশ যুবক র‌্যাম্পের রেলিং টপকে অন্য প্রান্তে গিয়ে ব্যারিকেডের ফাঁক গলে নবান্নের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ পুলিশকর্মীদের দিকে ইটও ছোড়েন। পাল্টা ইটবৃষ্টি করে পুলিশও! সেই সঙ্গেই সেতুর ওই জায়গা থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত এলাকা খালি করে দেওয়ার জন্য শুরু হয় বেপরোয়া লাঠিচার্জ। পুলিশের হামলা থেকে বাদ পড়েননি প্রবীণ সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ও। দেখা যায় প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছেন তিনি।

হেস্টিংস

বেলা দু’টো নাগাদ খিদিরপুর থেকে মিছিল এসে পৌঁছয় হেস্টিংসে, মাজারের পাশে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠার মুখে। বাম সমর্থকেরা প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে দ্বিতীয় ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। কাঁদানে গ্যাসের সঙ্গে দেদার লাঠিচার্জও করে পুলিশ। পায়ে চোট লাগে সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ীর। মাথা ফাটে ডায়মন্ডহারবারের সিপিএম নেতা আবদুল হাসিম মোল্লা, বড়িশার বৃদ্ধ সিপিএম নেতা সুব্রত দাশগুপ্তর। শমীকের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ এ দিন বারোটি বাস ভেঙেছে। বাসের ভিতর ঢুকে বয়স্ক, মহিলাদের পর্যন্ত লাঠিপেটা করেছে!’’ পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে বেলা তিনটে থেকে হেস্টিংস মো়ড় অবরোধ শুরু হয়। সাড়ে তিনটে নাগাদ পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়। এই সময় বহু বামকর্মী আহত হন।

ডাফরিন রোড

বেলা পৌনে দু’টো নাগাদ রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ থেকে বামেদের মিছিল নিউ রোড হয়ে ডাফরিন রোডে পৌঁছয়। সেখানে আগেই রাস্তা আটকে রেখেছিল পুলিশ। ব্যারিকে়ড ভাঙার চেষ্টা করেন বাম সমর্থকেরা। ইটও ছোড়েন। সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা ইট ছোড়ে পুলিশ। সেই সঙ্গে শুরু করে লঙ্কা গ্যাসের শেল ফাটাতে। আন্দোলনকারীরা পিছু হটা মাত্রই পিছন থেকে পুলিশ ছুটে এসে বেপরোয়া লাঠি চালাতে শুরু করে। লঙ্কা গ্যাসের ঝাঁঝে ইঞ্জিনিয়ার্স ক্লাবের সামনে অসুস্থ হয়ে পড়ে ছিলেন কেষ্টপদ ভট্টাচার্য। এডিসিপি (দক্ষিণ) অপরাজিতা রাইয়ের নেতৃত্বে পুলিশ তাঁকেও পেটায়! নির্বিচারে মারা হয় মহিলাদের। বিকেলে মেয়ো রোডের ফুটপাথে কর্মীদের নিয়ে বসেছিলেন বিমান বসু, মদন ঘোষ। ছিলেন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী। আচমকাই তাঁদের ঘিরে ধরে পেটায় পুলিশ।

ফোরশোর রোড

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সংযত থাকলেও ইটের আঘাতে কয়েক জন সহকর্মী জখম হতেই পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে হাওড়া সিটি পুলিশ। দুপুর দেড়টা নাগাদ রেল মিউজিয়ামের সামনে থেকে মিছিল এগোয় শিবপুর ফেরিঘাটের সামনে। সেখানেই তাঁদের রাস্তায় বসে পড়তে অনুরোধ করে পুলিশ। ফোরশোর রোডের একটা লেনে নেতা-কর্মীরা বসে পড়েন। কিন্তু পাশের লেন ধরে এগোনোর চেষ্টা করেন অনেকে। রামকৃষ্ণপুরঘাটমুখী রাস্তায় থাকা মিছিলের মধ্য থেকে আচমকাই পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোড়া শুরু হয়। আড়াইটে নাগাদ দু’টি জলকামান চালিয়েও থামাতে না পেরে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। তাতে বহু বাম নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হন।

ব্যাতড় মোড়

ব্যাতড় মোড়েও গোড়ায় ধৈর্য্যের পরীক্ষায় পাশ করেছিল হাওড়া পুলিশ। কিন্তু পাথর ও বোমা পড়তেই চেহারা পাল্টায়। দুপুরে দুটো নাগাদ কোনা এক্সপ্রেসওয়ের দিক থেকে আসা মিছিলকে আটকে দেওয়া হয়। আড়াইটে নাগাদ শুরু হয় অশান্তি। ব্যারিকেড করে থাকা পুলিশকে ধাক্কা মেরে, এগোনোর চেষ্টা শুরু হয়। সঙ্গে ইটবৃষ্টি। জলকামানও ছোড়ে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাস। মিছিল পিছনে হটলেও ফের অশান্তি বাধে দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ। ফের মিছিল এগিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছুড়তে শুরু করলে লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ফাটিয়ে মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এর পরে বাম কর্মীরা কোনা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police CPIM Nabanna March Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE