Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চারমূর্তিই ক্রমাগত বাঁচিয়ে যাচ্ছেন গুরুঙ্গকে

চারমূর্তির কেউ তিরিশের ঘরে, কেউ চল্লিশের। পুলিশের দাবি, এঁদের মধ্যে গুরুঙ্গের সব থেকে কাছের লোক তাঁর ভগ্নিপতি দাওয়া। কালিম্পঙের পেডংয়ের বাসিন্দা দাওয়াকে জিটিএ-তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়েছিলেন গুরুঙ্গ।

সঞ্জয় থুলুং, দীপেন মালে (উপরে, বাঁ দিক থেকে), প্রকাশ গুরুঙ্গ ও দাওয়া লেপচা (নীচে, বাঁ দিক থেকে)

সঞ্জয় থুলুং, দীপেন মালে (উপরে, বাঁ দিক থেকে), প্রকাশ গুরুঙ্গ ও দাওয়া লেপচা (নীচে, বাঁ দিক থেকে)

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৯
Share: Save:

তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ চার জন। কেউ অর্থের জোগান দেন, কেউ অস্ত্রের। এই চার জনের অধীনে আবার জিএলপি-র লোকজন রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, বিমল গুরুঙ্গকে ঘিরে রয়েছেন এই চারমূর্তি। পুলিশের দাবি অনুযায়ী তাঁরা হলেন, দীপেন মালে, দাওয়া লেপচা, সঞ্জয় থুলুং এবং প্রকাশ গুরুঙ্গ।

চারমূর্তির কেউ তিরিশের ঘরে, কেউ চল্লিশের। পুলিশের দাবি, এঁদের মধ্যে গুরুঙ্গের সব থেকে কাছের লোক তাঁর ভগ্নিপতি দাওয়া। কালিম্পঙের পেডংয়ের বাসিন্দা দাওয়াকে জিটিএ-তে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়েছিলেন গুরুঙ্গ। শনিবার দাওয়ার সন্ধানে কালিম্পঙের সিকিম লাগোয়া এলাকায় তল্লাশি চালায় পুলিশ। তাঁর ঘনিষ্ঠ সুমন ছেত্রীর বাড়ি থেকে প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার করে। পরে আলগাড়া বিডিও অফিসে আগুন লাগানোর অভিযোগে ওই এলাকার বাসিন্দা গুরুঙ্গ-দাওয়ার সহযোগী কেশর থাপাকে গ্রেফতারও করে।

ত্রিশোর্ধ্ব দীপেনের নাম মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় যুক্ত। জিটিএ ভোটে গুরুঙ্গ প্রার্থী হিসেবে প্রথম দিন শুধু দীপেনের (সে সময়ে জেলবন্দি) নাম ঘোষণা করে বলেন, ‘ওর বিরুদ্ধে কারও দাঁড়ানোর দরকার নেই’। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিলেন দীপেন।

সঞ্জয় ও প্রকাশও বলতে গেলে বিনা লড়াইয়ে জিটিএ সভাসদ হন। সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে একে ৪৭-সহ মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র রাখার অভিযোগ ওঠায় বিব্রত গুরুঙ্গ তাঁকে জিটিএ-র সদস্যপদ থেকে সরিয়ে দেন। দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। থুলুংয়ের ভাই গ্রেফতার হন। তিনি নেপালে পালিয়ে যান। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, দার্জিলিঙের আশপাশে তাঁকে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে।

চারমূর্তির মধ্যে সব থেকে কম বয়সী প্রকাশ। মদন তামাঙ্গ মামলায় যুব সভাপতি আলোকমণি থুলুং জেলে গেলে আচমকা প্রকাশকে সেই পদে বসিয়ে পাহাড়ের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ‘দেখভাল’-এর দায়িত্ব দেন। তাঁর বিরুদ্ধে এনএইচপিসি-র ঠিকাদারদের থেকে বিপুল টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে মোর্চার অন্দরেই।

পুলিশ সূত্রে দাবি, এই চার জনের সাঙ্গোপাঙ্গরা বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ হানার সময়ে গুরুঙ্গকে ‘কভার’ দেন। তাদের আরও দাবি, ওই সংঘর্ষের আগে চার জন রঙ্গিতের ধারে একটি ক্যাম্প করে রাতভর বৈঠক করেন। সেখানেই গুরুঙ্গকে প্রকাশ্যে আনার নীল নকশা তৈরি হয়। অস্ত্রভাণ্ডারের ভার পান সঞ্জয়। পালানোর রাস্তা তৈরির দায়িত্ব পান বাকি তিন জন। পুলিশ হানা দিলে ‘কভার ফায়ার’ করে বন পথে গুরুঙ্গকে ঘিরে রেখে ছুটে পালানোর রাস্তাও আগাম দেখে গিয়েছিল চারমূর্তির বাহিনী। ওই বাহিনীতে এক এক নেতার আস্থাভাজন ৪৫ জন করে প্রশিক্ষিত জিএলপি রয়েছে। যারা ২০১২-১৩ সালে উত্তর-পূর্ব ভারতে গিয়ে নাগা জঙ্গিদের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নথিতেই রয়েছে।

গুরুঙ্গের খোঁজ চালানোর সঙ্গে এই চার জনেরও নাগাল পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। তাদের বক্তব্য, চারমূর্তির এক বা দু’জনকে ধরতে পারলেও গুরুঙ্গের অর্থ ও অস্ত্র জোগানের পথ কিছুটা বন্ধ করা যাবে। তখন তাঁকে প্যাঁচে ফেলা সহজ হবে।

কিন্তু কাউকেই ধরতে পারবে পুলিশ? রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান, তদন্তের জাল গুটিয়ে আনা হচ্ছে। শীঘ্রই চারমূর্তির মধ্যে অন্তত ২ জনের হদিস মিলবে বলে তাঁদের আশা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

বিমল গুরুঙ্গ Bimal gurung
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE