Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আসল অস্ত্রভাণ্ডারের খোঁজে পুলিশ, অসমের সংগঠনগুলির সমর্থন পেলেন গুরুঙ্গ

এ দিকে রাজ্য পুলিশের কাছে খবর, দার্জিলিঙে লড়াই চালানোর জন্য অসমে জঙ্গিদের সাহায্য চেয়েছে মোর্চা। অসমে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ইউনাইটেড গোর্খা পিপলস অরগানাইজেশন। মোর্চার উত্তর-পূর্ব কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকেও তাদের নেতারা আসতেন। গুরুঙ্গের দলের অনেকের সঙ্গেই তাদের যোগাযোগ প্রমাণিত।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ১৭:৩৫
Share: Save:

পর্যাপ্ত সময় পেয়ে, ঘর গুছিয়েই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছেন বিমল গুরুঙ্গ। পাহাড়ের গোপন ঘাঁটি ও নেপালে সরিয়ে ফেলেছেন অস্ত্র ভাণ্ডার। এমনটাই মত রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের। একই সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গোর্খা আবেগকে সফল ভাবে উসকে পাহাড়ের মানুষের সমর্থনও আদায় করে নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অসমের এনডিএফবি, আবসু, পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিতে তৈরি যৌথমঞ্চগুলিরও প্রকাশ্য সমর্থন পেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

তেলঙ্গানা আন্দোলনের সময় থেকেই ন্যাশনাল ফেডারেশন অব নিউ স্টেটস-এর নেতারা অসমে আসতেন। সেখানে পৃথক গারোল্যান্ড, বড়োল্যান্ড, কমতাপুর রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন করা নেতারাও এক মঞ্চে হাজির হতেন। এসেছেন বিমল গুরুঙ্গও। এ বার দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে এনএফএনএস যেমন গুরুঙ্গ ও পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন, তেমনই অসমের বড়ো ছাত্র সংগঠন আবসু, পৃথক রাজ্য গঠনের যৌথমঞ্চ পিজিএসিবিএম ও এনডিএফবি প্রগ্রেসিভ যৌথ বিবৃতি দিয়ে গোর্খাল্যান্ডের স্বপক্ষে সরব হয়েছে। তাদের দাবি, বড়োল্যান্ড ও গোর্খাল্যান্ড ঐতিহাসিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে ন্যায্য অধিকার। আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যেমন তেলঙ্গানার জন্ম হয়েছে, তেমনই বড়ো ও গোর্খাদের দাবিকেও সম্মতি জানানো উচিত ছিল কেন্দ্রের। দার্জিলিঙের আগুন ও রক্তপাতের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবকে দোষ দিয়েছে বড়ো সংগঠনগুলি। পুলিশের মতে, এত দিন গুরুঙ্গের বিরোধী পক্ষ সক্রিয় থাকলেও, দার্জিলিংয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে নেপালীদের সমর্থন পুরোপুরি আদায় করে নিতে পেরেছেন গুরুঙ্গ। তাই আশ্রয় পেতে ও তা বদল করতে সমস্যা হচ্ছে না তাঁর। অথচ কোনও খবরই পাচ্ছে না পুলিশ। তাঁকে ঘিরে থাকছে নাগাল্যান্ড ও মায়ানমারে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরা গোর্খা বাহিনীর সদস্যরা।

এ দিকে রাজ্য পুলিশের কাছে খবর, দার্জিলিঙে লড়াই চালানোর জন্য অসমে জঙ্গিদের সাহায্য চেয়েছে মোর্চা। অসমে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ইউনাইটেড গোর্খা পিপলস অরগানাইজেশন। মোর্চার উত্তর-পূর্ব কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকেও তাদের নেতারা আসতেন। গুরুঙ্গের দলের অনেকের সঙ্গেই তাদের যোগাযোগ প্রমাণিত। তাই তাদের মাধ্যমে নাগাল্যান্ডে জঙ্গি সংগঠন ও উত্তরবঙ্গে মূল স্রোতে ফেরা কেএলও নেতাদের মাধ্যমে অসমে কেএলও জঙ্গিদের কাছে ইতিমধ্যে সাহায্যের বার্তা পাঠিয়েছেন মোর্চা নেতারা। চাওয়া হয়েছে অস্ত্র ও গুলি। তাই বাংলার সঙ্গে ভুটান ও অসমের কোকরাঝাড়, চিরাং, ওদালগুড়ি, ধুবুরির সব সীমানায় নজরদারি কড়া করা হয়েছে। খাপলাং বাহিনীও জিএলপিকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করত। তারা এখন নেতৃত্বের লড়াই নিয়ে ব্যস্ত। সেই সুযোগে দলের জঙ্গিরা নাগাল্যান্ডে থাকা অস্ত্র ও গুলি বিক্রি করতে চাইছে। কেএলও ও ইউজিপিএর মাধ্যমে সেই সুযোগ নিতে চাইছে মোর্চা।

আরও পড়ুন: ‘সবই গুজব’: রাষ্ট্রপতি পদের দৌড়ে থাকার জল্পনা নস্যাৎ করলেন সুষমা

মোর্চা নেতা ও সদস্যদের হাতে প্রচুর বিদেশী মারণাস্ত্র থাকলেও মোর্চা দফতরে হানা দিয়ে তেমন কিছুই মেলেনি। অথচ পুলিশ নিশ্চিত একে সিরিজ রাইফেল, বিদেশি সাব মেশিনগান, বিদেশি পিস্তল ইউজিপিএর হাত ঘুরে নাগাল্যান্ড থেকে পাহাড়ে ঢুকেছে। কিন্তু সেই সব অস্ত্র সম্ভবত আগেই পাহাড়েরগোপন ঘাঁটি বা নেপালে সরিয়ে ফেলেছেন গুরুঙ্গরা। গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল বাহিনীর প্রশিক্ষণের সময় থেকেই নেপালের মাওবাদীদের সঙ্গও মোর্চা নেতাদের সদ্ভাব ছিল। কিন্তু গোয়েন্দারা জেনেছেন অস্ত্র আনলেও দীর্ঘদিন লড়াই চালানোর মতো গুলির রসদ তাদের নেই। তাই আপাতত অসম থেকে গুলির জোগাড়ের চেষ্টায় আছে মোর্চার অ্যাকশন টিমের নেতারা। পুলিশ আপাতত মোর্চার সেই অস্ত্রভাণ্ডার খুঁজছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE