Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমিকার স্বামীকে খুন করে ভেঙে পড়লেন অজিত, নির্বিকার প্রেমিকা মনুয়া!

যুবক খুনে টানা পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়ল স্ত্রীর প্রেমিক। অনুতাপে কেঁদেও ফেলল সে। স্ত্রী তবুও অবিচল! বারাসতের অনুপম সিংহকে খুনের ঘটনায় দিনভর জেরার পরে শনিবার বিকেলে এমনটাই জানাল পুলিশ। এ ক’দিন কিছুটা স্বাভাবিক থাকার পরে এ দিন পুলিশের সামনে কেঁদে ফেলে অনুপমের স্ত্রী মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায়। বলে, ‘‘বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।’’

স্বামীর সঙ্গে মনুয়া। ছবি অনুপমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে

স্বামীর সঙ্গে মনুয়া। ছবি অনুপমের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ০২:০৮
Share: Save:

যুবক খুনে টানা পুলিশি জেরার মুখে ভেঙে পড়ল স্ত্রীর প্রেমিক। অনুতাপে কেঁদেও ফেলল সে। স্ত্রী তবুও অবিচল!

বারাসতের অনুপম সিংহকে খুনের ঘটনায় দিনভর জেরার পরে শনিবার বিকেলে এমনটাই জানাল পুলিশ। এ ক’দিন কিছুটা স্বাভাবিক থাকার পরে এ দিন পুলিশের সামনে কেঁদে ফেলে অনুপমের স্ত্রী মনুয়ার প্রেমিক অজিত রায়। বলে, ‘‘বড় ভুল হয়ে গিয়েছে।’’

এ দিনের জেরার শেষে পুলিশের বক্তব্য, স্বামী এবং প্রেমিক, দু’জনেই মনুয়ার প্রেমে অন্ধ ছিল। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিল মনুয়া মজুমদার। জেরার মুখে ভেঙে পড়ে অজিত জানিয়েছে, মনুয়াকে সে প্রচণ্ড ভালবেসে ফেলেছিল। দিনের পর দিন মনুয়া ফোন করে অনুপমের নামে নানা নালিশ করত। বলত, অনুপম তাকে শারীরিক সম্পর্কের নামে অত্যাচার করে। সে মেনে নিতে পারছে না। সে শুধু অজিতেরই। ‘‘আমি প্রেমে অন্ধ হয়ে গিয়েই এই কাজ করেছি,’’ পুলিশের কাছে বলেছে অজিত।

মনুয়া কিন্তু এখনও নির্লিপ্ত। পুলিশের দাবি, কোনও রকম অনুতাপ এ দিনও ছিল না মনুয়ার আচরণে। বরং অনুপম সম্পর্কে এ দিন সে বলে, ‘‘বড় বেশি ভাল মানুষ টাইপের ছিল।’’

পুলিশকে মনুয়া এ-ও জানিয়েছে যে, অনুপম মাঝেমধ্যে সিগারেট খেলেও কখনওই মদ্যপান করতেন না। অন্যেরা করলেও পছন্দ করতেন না। এমনকী, বিদেশে ঘুরতে গিয়েও মদ্যপান নিয়ে আপত্তি করতেন তিনি। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে অজিত অনেক ‘অ্যাডজাস্টেবল’ বলে দাবি মনুয়ার। অজিতের সঙ্গে অনেক বার মদ্যপান করেছে সে।

পুলিশ জানায়, অজিতের সঙ্গে কথার সূত্র ধরে মনুয়ার এক ‘মাসতুতো ভাই’কে জেরা করা হবে। খুনের পরদিন দরজা খুলে অনুপমকে মৃত অবস্থায় প্রথম দেখে ওই ‘ভাই-ই’। তবে এ দিন সেই ‘ভাই’ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, মনুয়াই তাকে ফোন করে বলেছিল, ‘তোর জামাইবাবুকে ফোনে পাচ্ছি না। বাড়ি গিয়ে আমাকে একটা ফোন করতে বল তো।’ যা শুনে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘একে মহিলা, দ্বিতীয়ত স্বামী, তৃতীয়ত, জীবনে প্রথম খুন। তাতেও কেউ যে এতটা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে, মনুয়াকে না দেখলে সেটা বিশ্বাস করা যায় না।’’

পুলিশ জানাচ্ছে, স্ত্রী মনুয়াকে অসম্ভব ভালবাসতেন অনুপম। বিয়ের পরেই স্ত্রীকে নিয়ে ব্যাঙ্কক, পটায়ায় ঘুরতে যান। বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েও বড় করে ‘রিসেপশন’ করেন। খুনের মাস দুয়েক আগে প্রথম বিবাহবাষির্কীও পালন করেন কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে।

ফেসবুকে দু’জনেরই প্রোফাইল আছে। অনুপম-মনুয়া কতটা আলাদা, সেখানেও তার পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। মনুয়ার প্রোফাইল তার ছবি, নিজস্বীতে ভরা। অনুপমের প্রেফাইল দেখলে বোঝা যায়, তার সব ভাবনা ছিল মনুয়াকে ঘিরে। সেখানে আছে মনুয়ার সঙ্গে বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি। স্ত্রীকে নিয়ে ভালবাসার কথা।

মনুয়ার পড়াশোনা আগাগোড়াই বারাসতে। একটু বেপরোয়া মেজাজ ছাড়া তার মধ্যে কখনও আর কোনও রকম গোলমাল দেখেননি পাড়ার বাসিন্দারা। এ দিন তাঁরা জানিয়েছেন, একটা স্কুটার নিয়ে ঘুরে বেড়াত মনুয়া। নাচের সুবাদে অনেকের সঙ্গেই আলাপ-পরিচয় ছিল তার। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে কয়েকটি প্রেম ছাড়া মনুয়া সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য আর কিছু চোখে পড়েনি কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE