রাজ্যে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ হতে পারে। তার মধ্যেই শিশুদের উপহার হিসেবে দেওয়া হলো বাজি। সোমবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
উত্তর থেকে দক্ষিণ, কলকাতার পাঁচ জায়গায় বসেছে বাজির বাজার। আরও বহু বাজি বিক্রেতা হরেক রকম আতসবাজির পসার সাজিয়ে বসেছেন শহরের বহু তল্লাটে। কেনাবেচাও শুরু হয়েছে। কিন্তু সঙ্গে একটা তিরতিরে আশঙ্কা। যেটা এ বারই প্রথম। এত কিছু সাজগোজ হঠাৎ কোনও নিষেধাজ্ঞায় পণ্ড হবে না তো!
শৈশব অবশ্য অতশত বোঝে না। বলা ভাল, তাদের বোঝানোর মতো অবস্থা এতদিন ছিল না। তারা বোঝে ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি, ইলেকট্রিক তার, ডায়মন্ড বাজি। কোনওটা থেকে শব্দের বিপদ নেই। তবে প্রত্যেকটা পোড়ালেই ধোঁয়ায় বিষিয়ে যাবে বাতাস। রবিবার টালা সার্কাস ময়দানে বাজি বাজার উদ্বোধনের সময়ে প্রায় ১০০ জন প্রান্তিক শিশুর এক-এক জন এমন দেড়শো টাকার বাজি পেয়েছে ‘দেওয়ালি উপহার’ হিসেবে। ওরা কেউ থাকে টালা এলাকার কোনও বস্তিতে, কেউ বা অনাথ, থাকে কোনও হোমে। কিন্তু এই উপহার কতটা সমর্থনযোগ্য, প্রশ্ন উঠেছে সে নিয়ে।
এই উপহার এমন সময়ে দেওয়া হলো যখন দিল্লির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের এক নির্দেশের জেরে এই রাজ্যের মানুষ ভাবতে শুরু করেছেন, সব রকম বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গেও নিষেধাজ্ঞা নেমে আসতে পারে যে কোনও সময়ে। তাঁরা মনে করছেন, কোনও কারণে এ বার যদি রেহাই পাওয়া যায়, পরের বছর থেকে বাজি পোড়ানো অবধারিত বন্ধ হবে। বাজি প্রস্তুতকারক থেকে পাইকার, বিক্রেতা থেকে ক্রেতা অনেকেরই এই ধারণা।
পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পরম্পরার দোহাই দিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন বাজি পোড়ানো বন্ধ হবে না। কিন্তু টালা বাজি বাজারের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না-সহ একাধিক বাজি বিক্রেতা বলছেন, ‘‘বহু ক্রেতা আমাদের জিজ্ঞাসা করছেন, এই বছরই কি এখানে বাজি শেষ বারের মতো বিক্রি হচ্ছে?’’ একই প্রশ্ন কমবেশি শহরের অন্যান্য বাজি বাজারেও। অন্য বার ময়দানের বাজি বাজার থেকে এতদিনে বিপুল টাকার বাজি কিনে ফেলেন,
এমন ক্রেতাদের একাংশ এ বার এখনও বাজি কেনেননি। তাঁরা অপেক্ষা করতে চান। তাঁদের আশঙ্কা, আদালত আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করলে সব টাকা কার্যত জলে যাবে।
দিল্লির সঙ্গে গোটা দেশেই সব রকম বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়ে এই রাজ্যের পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের আবেদন আজ, মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ার কথা। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, বাজির ক্ষেত্রে নতুন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারির ক্ষমতা তাদের নেই। তাই, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি। আমি জানতে চেয়েছি, দিল্লির নিষেধাজ্ঞা কেন বাকি দেশেও জারি হবে না!’’
তবে বাজির দূষণের বিরুদ্ধে সরব রাজ্যের অন্য দুই পরিবেশকর্মী পর্ষদের কাছে আবেদন করাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেছেন।
এঁদের অন্যতম, পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘হুট করে আদালতে গেলে প্রশ্ন উঠতে পারে, আমরা রাজ্যের উপযুক্ত সংস্থা অর্থাৎ পর্ষদের কাছে গিয়েছি কি না। তাই, পর্ষদে আবেদন করেছি।’’ তাঁর আবেদনে বিশ্বজিৎবাবু সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দিতে পর্ষদকে অনুরোধ করেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ আইনে এমন বিধিনিষেধ পর্ষদ আরোপ করতেই পারে। অন্তত রাজ্যের শহর এলাকাগুলিতে এটা করা হোক। গ্রামের চেয়ে যেখানে দূষণ বেশি।’’
আর এক পরিবেশকর্মী নব দত্ত অবশ্য পর্ষদের কাছে তাঁর আবেদনে সমস্ত বাজি সর্বত ভাবে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্যে মাত্র তিনটি বাজির কারখানা আইন মেনে চলছে। বাকি সব বাজির কারখানা বেআইনি। এই অবস্থায় কঠোর অবস্থান নেওয়া দরকার।’’ নববাবুর বক্তব্য, শব্দবাজির উপর এই রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা ঠিকঠাক কার্যকর করা হয় না। তাই, সব বাজিই নিষিদ্ধ হোক, এমনটা চাইছেন তিনি।
বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এখন যা পরিস্থিতি, তাতে প্রান্তিক শিশুদের দীপাবলির উপহার হিসেবে বাজি না দিয়ে নতুন একটা জামা আর প্রদীপ বা মোমবাতি দিলে ঠিক হতো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy