Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

হামলা-পাল্টা হামলার নালিশ পূর্ব মেদিনীপুরে

ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক সন্ত্রাস অব্যাহত পূর্ব মেদিনীপুরে। ময়না, পাঁশকুড়া, পটাশপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, বাড়ি ভাঙচুর, মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

সুতাহাটায় সিপিএম সমর্থকের বা়ড়িতে ভাঙচুর।

সুতাহাটায় সিপিএম সমর্থকের বা়ড়িতে ভাঙচুর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

ফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক সন্ত্রাস অব্যাহত পূর্ব মেদিনীপুরে। ময়না, পাঁশকুড়া, পটাশপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, বাড়ি ভাঙচুর, মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ময়না বাজার এলাকায় সিপিআই, আরএসপি ও সিপিএমের তিনটি দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর হয়েছে। শুক্রবার ওই কার্যালয়গুলি দেখতে যান জেলা বাম নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির অভিযোগ, ‘‘জেলায় এ বার আশানুরূপ ফল না-হওয়ায় বাম-কংগ্রেস সমর্থকদের আক্রমণ করছে তৃণমূল।’’ ময়নার ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত মালাকারের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ‘‘এর সঙ্গে আমাদের দলের কেউ জড়িত নয়। বরং ওই সন্ধ্যায় তৃণমূল সমর্থক পুলিন মাইতিকে মারধর করেছে জোট সমর্থকরা। আমরা দলীয় কর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি।’’

বিপুল জয়ের খবর পেয়েই পাঁশকুড়া থানার গোবিন্দপুর গ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়ে তৃণমূলের পতাকা লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রাতে চৈতন্যপুর এলাকার নীলমণিরামচক গ্রামে তৃণমূল সমর্থকরা মিছিল করে এসে স্থানীয় চার কংগ্রেস সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।

রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ কংগ্রেস সমর্থক গোবিন্দ বেরা, হরিপদ সামন্ত, গৌতম সামন্ত, শেখ ইব্রাহিম আলির বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। সে সময় বাড়ির সকলে পালিয়ে গেলেও আটকে পড়েন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা।

সিপিএমের দলীয় কার্যালয় দখল করার কথা অবশ্য স্বীকার করেছেন পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপ্তি জানা। তিনি বলেন, ‘‘গোবিন্দপুরে যাঁরা ওই কার্যালয় তৈরি করেছিলেন তাঁরা এখন আমাদের দলে। এ দিন ওই কর্মীরাই আমাদের দলের পতাকা তুলেছেন।’’ তবে কংগ্রেস সমর্থকদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন দীপ্তিবাবু।

ভস্মীভূত হলদিয়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তৃণমূল কার্যালয়।

পাঁশকুড়ার মাইশোরা এলাকায় সোনু আলি নামে এক বাম সমর্থকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। আহত ওই যুবককে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ দিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়িতে তৃণমূল সমর্থকরা বাজি ফাটানোর সময় স্থানীয় একটি প্রাচীন কাঠের রথে আগুন লেগে যায়। তমলুক থেকে দমকলবাহিনী গিয়ে আগুন নেভানোর আগেই রথটি ভস্মীভূত হয়ে যায় বলে অভিযোগ।

হলদিয়াতেও ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে তপ্ত বন্দর শহর। তৃণমূলের অভিযোগ বৃহস্পতিবার রাতে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। ভস্মীভূত হয় আলমারিতে থাকা শ্রমিকদের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের জন্য রাখা কার্ড। জেলা তৃণমূলের শ্রমিক নেতা শিবনাথ সরকার শুক্রবার বলেন, সিপিএম জয়ের পর সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।’’ এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য শাসমল, সিটু নেতা দেবেশ আদক, বলাই পাল-সহ একাধিক বাম নেতার বিরুদ্ধে হলদিয়া থানায় অভিযোগ জানানো। যদিও হলদিয়া সিপিএমের জোনাল সম্পাদক শ্যামল মাইতি বলেন, ‘‘অসত্য অভিযোগ। এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল।’’

সুতাহাটা থানা এলাকার কাশীপুর গ্রামে মোজাম্মেল হক নামে এক তৃণমূল নেতার মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। স্কুল শিক্ষক মোজাম্মেলকে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর তৃণমূলও পাল্টা হামলা চালায় তিন সিপিএম সমর্থকের দোকানে। সুতাহাটা থানা গ্রেফতার করেছে আট জনকে। সিপিএমের অভিযোগ, ধৃতদের মধ্যে সাত জনই তাঁদের দলের। এ দিন সকালে হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল, শ্যামল মাইতি, পুলকেশ মিশ্র সুতাহাটা থানায় যান। তাঁদের অভিযোগ, পারিবারিক বিবাদকে কাজে লাগিয়ে একই পরিবারের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, মারাত্মক আঘাত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ বাড়াবাড়ি করেছে। আমাদের সমর্থকদের বিনা দোষে গ্রেফতার করে মারধর করেছে।’’ এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় জানান, ‘‘দশ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, আমরা আট জনকে গ্রেফতার করেছি।’’

অন্য দিকে নির্বাচনের সময় তাপসী মণ্ডলের ছায়াসঙ্গী পূর্বাশা সামন্তর বাড়িতে দফায় দফায় হামলা করেছে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। শুক্রবার কুমারচকের বাড়িতে এমনই অভিযোগ করেছেন পূর্বাশাদেবী। তিনি বলেন, ফল ঘোষণার পর আমার বাড়িতে বুথ ভিত্তিক বিশ্লেষণে বসেছিলাম। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তপন মণ্ডলের নেতৃত্বে জনা তিরিশেক বহিরাগত যুবক মুখে কাপড় বেঁধে এসে বাড়িতে হামলা চালায়।’’ তাঁর অভিযোগ বিকেলে শাসানি দিয়ে রাতে বাড়ির বাইরের দরজা, জানলা ভাঙচুর করা হয়। বোমাবাজিও হয় বলে অভিযোগ। কুমারচকেই সিপিএমের পোলিং এজেন্ট হওয়ার সমর কাঁঠালের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা ভাবে থানায় অভিযোগ জানায় সিপিআইএম। তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হলদিয়া বন্দর শ্রমিক ভবনের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই তৃণমূল সমর্থক। তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, শুক্রবার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দর শ্রমিক ভবনে চড়াও হন একদল সিপিএম সমর্থক। যদিও শুক্রবার দুপুরে হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তবে অনেকেই বলছেন সূত্রের খবর, বন্দর শ্রমিক ভবনে হারের ময়না তদন্ত নিয়ে তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যেই বচসা বাধে। হলদিয়া বন্দরের আইএনটিটিউসির শ্রমিক নেতা শ্যামল আদক দাবি করেন, ‘‘কিছু সিপিএমের সমর্থক আগেই হুমকি দিয়ে গিয়েছিল। এ দিন ফল ঘোষণার পর সন্ধ্যায় সবুজ আবির মেখে এসে অফিস ভাঙচুর চালায়।’’ সিটু নেতা লক্ষ্মী সামন্ত অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমাদের কোনও যোগ নেই। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Midnapore Midnapore Political terror
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE