Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পদ চিহ্নিত করাতেই কি ভুল  

বিকাশ ভবনের খবর, আগে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হত তিন ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-গ্রাজুয়েট, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অনার্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক নিয়োগ করা হত।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৯
Share: Save:

কোন স্তরের জন্য শিক্ষক প্রয়োজন সেই ‘পদ’ চিহ্নিতকরণে ভুল হয়েছিল। পাশাপাশি, মাধ্যমিকস্তরের দু’টি শূন্য পদকে উচ্চমাধ্যমিকস্তরে পরিবর্তিত করে স্কুল পরিদর্শকও ঠিক কাজ করেননি। ইসলামপুরের গোলমালের জেরে বিকাশ ভবনের তদন্তে এ দু’টি বিষয়ই উঠে এসেছে। জেলা প্রশাসন ও স্কুলশিক্ষা ডাইরেক্টরেট থেকে যে রিপোর্ট দফতর পেয়েছে তাতেও একই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

বিকাশ ভবনের খবর, আগে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হত তিন ধরনের যোগ্যতার ভিত্তিতে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাস-গ্রাজুয়েট, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত অনার্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের শিক্ষক নিয়োগ করা হত। কিন্তু ২০১৬ সালে এনসিটিই-র নির্দেশিকা মেনে শিক্ষকদের যোগ্যতা বদলে যায়। পাস-গ্রাজুয়েট হলেই
মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াতে পারা যায়। উচ্চমাধ্যমিকের জন্য চায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

বিকাশ ভবনের এক সূত্র জানাচ্ছে, ২০১৩ সালে ইসলামপুরের দাড়িভিট স্কুল মাধ্যমিকস্তরের তিন জন শিক্ষক চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। উর্দু, সংস্কৃত এবং হিন্দির তিনজন শিক্ষক চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরনো নিয়মে তাঁদের যোগ্যতা হওয়ার কথা অনার্স বা স্নাতকোত্তর। কিন্তু ২০১৬ সালে সেই যোগ্যতা বদলে যায়। ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশনে যখন শূন্যপদের তালিকা ওঠে, তখন তা উচ্চমাধ্যমিকস্তরের জন্য চিহ্নিত করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে, সেই ভুল হল কেন, হলে তা কোথায় হয়েছে?

বিকাশ ভবনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, স্কুল, ডিআই অফিস বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের আঞ্চলিক অফিসে কোথাও ২০১৬তে এই ভুল হয়েছে। মূলত শিক্ষক পদের যোগ্যতা মান বদলে যাওয়াতেই ট্যাবুলেশনে এই ভুল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

বিকাশ ভবন জেনেছে, ওই দুই শিক্ষক নিজেরাই দাড়িভিট স্কুল বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা নিয়োগপত্র পাওয়ার পর যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে গেলে স্কুল জানায়, উচ্চমাধ্যমিকস্তরে এমন কোনও শূন্যপদ নেই। কারণ, স্কুল জানত ২০১৩ সালের দাবি অনুযায়ী মাধ্যমিকস্তরে তিনটি পদ খালি রয়েছে।

এর পর ১৮ সেপ্টেম্বর দুই শিক্ষক কাজে যোগ দিতে গেলে স্কুলে গোলমাল হয়। পরিচালন সমিতির তরফে আন্দোলনকারীদের মুচলেকা লিখে ওই শিক্ষকদের কাজে যোগ দিতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বিকাশ ভবন মনে করছে, এই মুচলেকা লেখার কোনও প্রয়োজন ছিল না। সে দিন মুচলেকা যেমন লেখা হয়েছে, তেমনই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডিআই অফিসে ওই দু’টি পদ মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করে দেওয়ার প্রস্তাবও পাঠানোয় ১৯ সেপ্টেম্বর ডিআই কাউকে কিছু না জানিয়ে সেই পদ দুটি বদলে দেন। বিকাশ ভবনের দাবি, ওই দুই শিক্ষককে কাজে যোগ না দেওয়ালে গোলমাল হতে পারে এ কথা জেনেই নাকি ডিআই স্কুলের দাবি মেনে পদ দুটি বদলে দিয়েছিলেন। প্রশ্ন, ডিআইয়ের এই ক্ষমতা ছিল কি?

বিকাশ ভবনের তদন্তে জানা গিয়েছে, ১৯৯৪ সালে স্কুল শিক্ষা দফতর ‘পদ বদলের’ ক্ষমতা ডিআইয়ের দিয়েছিল। পরবর্তীকালে তা বেশ কয়েকবার ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। কিন্তু গত দু’বছর ধরে নাকি ডিআইদের মৌখিকভাবে এসব করতে নিষেধ করা হয়েছিল। কয়েকটি জেলা তা মেনে সব কিছুই বিকাশ ভবনে পাঠিয়ে দিত। কয়েকটি জেলা তা করত না। ইসলামপুরের ক্ষেত্রে স্থানীয় চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ডিআই এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন বলে মনে করছেন দফতরের কর্তাদের একাংশ। তবে শিক্ষক নেই বলে যে আওয়াজ দাড়িভিট স্কুলে উঠেছে তা মানতে নারাজ দফতর। সূত্রের খবর, স্কুলের অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২২। এখন প্যারাটিচারসহ ২২ জন শিক্ষকই কাজ করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Selection Procedure report Islampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE