Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সম্ভব নয় আসন পূরণ

জোর করলে দায় নেবে না প্রেসিডেন্সি

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, আসন খালি রাখা যাবে না বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছেন এবং সরকারও নিজেদের অবস্থানে অনড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে পাঠানো রিপোর্টে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছিল, মানের সঙ্গে আপস করে খালি আসন ভরানো যাবে না। বুধবার উচ্চশিক্ষা সচিবের সঙ্গে দেখা করে উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া একই সুরে জানান, চলতি শিক্ষাবর্ষে ফাঁকা আসন কোনও মতেই পূরণ করা সম্ভব নয়।

আসন পূরণে বাধ্য করানো হলে তাঁরা যে সেই সব ছাত্রছাত্রীর ফলাফলের দায়দায়িত্ব নেবেন না, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন উপাচার্য। বলেছেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতর যদি বলে ভর্তি নিয়ে নেব। কিন্তু ফেল করলে আমাদের দায়িত্ব থাকবে না।’’

বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, আসন খালি রাখা যাবে না বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আগেই জানিয়ে দিয়েছেন এবং সরকারও নিজেদের অবস্থানে অনড়। শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে সচিবের সঙ্গে কথা বলবেন।

প্রেসিডেন্সির আসন কেন ভরানো সম্ভব নয়, উচ্চশিক্ষা সচিব রাজেন্দ্র শুক্লের কাছে তা ব্যাখ্যা করেন উপাচার্য। পরে লোহিয়া জানান, প্রেসিডেন্সিতে সেমেস্টার পদ্ধতি এবং ‘চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম’ বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ চালু আছে। প্রথম বর্ষের প্রথম সেমেস্টারের ক্লাস গত ৩ নভেম্বর শেষ হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা শুরু ২০ নভেম্বর। এই অবস্থায় নতুন করে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়।

গত বছরের মতো এ বারেও প্রেসিডেন্সির স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে প্রথম বর্ষে তিনশোরও বেশি আসন ফাঁকা রয়েছে। এতে শিক্ষা মহল বিস্মিত। শিক্ষামন্ত্রী এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করার পরে উচ্চশিক্ষা দফতর প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চায়, এত আসন খালি কেন? প্রেসিডেন্সির পাঠানো রিপোর্টে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রথমত, মানের সঙ্গে আপস করে আসন ভরানো সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, যাঁরা ভর্তি হয়েও ক্লাসে যোগ দেননি, তাঁদের জন্য কিছু দিন অপেক্ষা করাটাই দস্তুর। তৃতীয়ত, যে-সব আসন খালি আছে, তার বেশির ভাগই সংরক্ষিত।

সংরক্ষণ বিধি অনুযায়ী সংরক্ষিত আসন পূরণ না-হলে সেগুলোকে সাধারণ আসনে পরিণত করে ভর্তি নিতে হবে। এই নিয়ম মেনে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে সংরক্ষিত ফাঁকা আসনে ভর্তির নির্দেশ দেয় উচ্চশিক্ষা দফতর। উপাচার্য স্বীকার করছেন, এই নির্দেশ তাঁদের আগেই মানা উচিত ছিল। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এ বছর আর তা সম্ভব নয়। সামনের বছর থেকে নিয়ম মেনে চলবেন।

প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষের দাবি, খালি আছে মূলত সংরক্ষিত আসনই। কিন্তু প্রেসিডেন্সির অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রায় ৫০% আসন সংরক্ষিত থাকে কী করে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, কত পড়ুয়া ভর্তি হয়েও অন্যত্র চলে গিয়েছেন, উচ্চশিক্ষা দফতরকে তার হিসেব দেওয়া হয়নি। উপাচার্য এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। বলেন, ‘‘যা জানানোর সচিবকে জানিয়েছি।’’ উপাচার্য জানান, সরকার চাইলে পরের বছর থেকে তাঁরা ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতামান কমিয়ে দেবেন।

এত আসন ফাঁকা থাকায় উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী সংসদও। এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে তারা মন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে। আলোচনাসভার ডাক দিয়েছে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্সি ক্যাম্পাসে প্রাক্তনী সংসদের দফতর সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সংসদের সচিব বিভাস চৌধুরী জানান, তাঁদের জানানো হয়েছে, প্রাক্তনী সংসদের দফতর সাফাইয়ের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের এক্তিয়ারে পড়ে না। ‘‘এই জবাবে আমরা সত্যিই অবাক,’’ বলেন বিভাসবাবু। উপাচার্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE