Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

জোটের টানা ঘেরাওয়ে অসুস্থ অধ্যক্ষ

কলেজের চার দেওয়ালে জোটের জোর দেখানো শুরু করে দিল ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই। দু’জনেরই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।

চাঁচল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপেশ লাহি়ড়ীকে ঘিরে বিক্ষোভ ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের জোটের।— নিজস্ব চিত্র।

চাঁচল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপেশ লাহি়ড়ীকে ঘিরে বিক্ষোভ ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআইয়ের জোটের।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share: Save:

কলেজের চার দেওয়ালে জোটের জোর দেখানো শুরু করে দিল ছাত্র পরিষদ ও এসএফআই। দু’জনেরই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে মালদহের চাঁচল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তপেশ লাহিড়ীকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেছে ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই। এই দুই ছাত্র সংগঠনের জোটের দাবি, তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ তপেশবাবুকে অপসারণ করতে হবে। তপেশবাবু কিন্তু এই চাপের মধ্যেও পুলিশ ডাকেননি।

শুক্রবার সকালে তিনি অসুস্থও হয়ে পড়েন। হাসপাতালের এক চিকিত্সক কলেজে এসে অধ্যক্ষকে দেখে যান। রক্তচাপ বাড়ায় সাময়িক ভাবে তাঁর সমস্যা হয়েছিল বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।

গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল মিশ্র বলেন, সমস্যা মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে যা যা করণীয়, সব কিছুই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাদেরও কিছুই জানাননি। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

মাস ছ’য়েক আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাহুল আমিন কলেজ ছাড়ার পর তপেশবাবুকে ছ’মাসের জন্য ওই পদে বসানো হয়। কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের দখলে। তাঁদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের গাফিলতিতেই অভাবি পড়ুয়াদের ফি মকুব করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কলেজে ক্যান্টিন, এনসিসি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাস কোর্স থেকে যাঁরা অনার্সে ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। এসএফআই ও সিপি-র নেতাদের দাবি, ছাত্রস্বার্থ বিরোধী কাজের ভুরিভুরি অভিযোগ উঠলেও শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলে মেয়াদ ফুরোনোর পরেও তপেশবাবুকে রেখে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের ফর্ম পূরণের শেষ দিন থাকলেও অনেকের ফর্ম পূরণ করতে পারেননি। তারপরেই আন্দোলনে নামে ছাত্র পরিষদ। তাদের সঙ্গী হয় এসএফআই-ও। কলেজের জিএস মহম্মদ ফিরদৌস ইসলাম ও এসএফআইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিতেশ পাণ্ডে এক সঙ্গেই বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ টিএমসিপির কথা মতো চলছেন। তিনি অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তবে তাঁকে কলেজ ছাড়তে না দেওয়া হলেও রাতে খেতে বা ঘুমোতে আমরা কোনও বাধা দিইনি।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশে ফর্ম পূরণের সময়সীমা দু’দিন বাড়ানোর পর শুক্রবার থেকে ফর্ম পূরণের কাজও শুরু হয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে কলেজ ছাড়তে দেওয়া হবে না বলে আন্দোলনকারীরা হুমকি দেওয়ায় সমস্যা মেটেনি। কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে ফর্ম পূরণ শুরু হওয়ার পর নিজের চেয়ারে বসেই কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন তপেশবাবু। কাগজপত্র দেখেছেন। তার মধ্যেই বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছে। তপেশবাবু বলেন, ‘‘ওদের সব দাবি অযৌক্তিক নয়। কিন্তু আমাকেও বাধ্যবাধ্যকতার মধ্যে কাজ করতে হয়।’’ কিন্তু কী সেই বাধ্যবাধ্যকতা? তা নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেননি তিনি।

চাঁচল কলেজের টানা অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন প্রশাসক বিকাশ রায়। তিনি বলেন, ‘‘অধ্যক্ষকে সরালেই কি কলেজ বাঁচানো যাবে? আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। দেখি কী করা যায়। অধ্যক্ষকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।’’

কিন্তু জোটের ঘেরাও কখন উঠবে, তার কোনও ইঙ্গিত রাত পর্যন্ত মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE