Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিবাদ বন্ধে হুমকির অভিযোগ, বিতর্কে কলাভবন

ভিন্ রাজ্যের এক ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আগেই উঠেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বার সেই ঘটনার প্রতিবাদকেও ধমকে চুপ করানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠল। কলাভবনের সেরামিক বিভাগের এক ছাত্রী সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়া এবং সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য ডিজাইন বিভাগের প্রধান গৌতম দাস তাঁকে ঘরে আটকে রেখে ফেল করানোর ভয় দেখান। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভয় দেখানো, বে-আইনি ভাবে আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”

বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র

বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

ভিন্ রাজ্যের এক ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ আগেই উঠেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বার সেই ঘটনার প্রতিবাদকেও ধমকে চুপ করানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠল।

কলাভবনের সেরামিক বিভাগের এক ছাত্রী সোমবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়া এবং সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য ডিজাইন বিভাগের প্রধান গৌতম দাস তাঁকে ঘরে আটকে রেখে ফেল করানোর ভয় দেখান। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভয় দেখানো, বে-আইনি ভাবে আটকে রাখা ও হুমকি দেওয়ার মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”

অন্য দিকে, কলাভবনের প্রথম বষের্র ভিন্ রাজ্যের ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত মামলায় এ দিনই দুপুরে বিশ্বভারতীর উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তকে জেরা করে পুলিশ। উপাচার্য ও কলাভবনের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বীরভূমের এসপি-র কাছে অভিযোগ করেছিলেন ছাত্রীটির বাবা। এ দিন এসডিপিও (বোলপুর)-সহ পাঁচ পুলিশ অফিসার উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলেন। এসডিপিও পরে বলেন, “নির্যাতিতার বাবার অভিযোগের তদন্তের জন্য উপাচার্যকে জেরা করা হয়েছে।”

ভিন্ রাজ্যের ওই ছাত্রীকে নির্যাতনের প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। তাঁদের অন্যতম, কলাভবনের সেরামিক বিভাগের এক ছাত্রী। আর সে জন্যই তাঁকে কর্তৃপক্ষের ‘রোষে’ পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রীর দাবি, রবিবার দফতরে ডেকে দরজা বন্ধ করে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়া, সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলার জন্য তাঁকে শাসানি দেন গৌতমবাবু। বলেন, ‘তোমার বাবাকেও অপদস্থ করে কলাভবন থেকে তোমাকে বিদায় করব। তোমাদের জন্য মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে।’ ছাত্রীর আরও অভিযোগ, “কী করে ফিফ্থ সেমেস্টারে পাশ করো, তা তিনি দেখে নেবেন বলেও হুমকি দেন গৌতমবাবু।”

বিভাগীয় প্রধান গৌতমবাবুর দাবি, “অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই ছাত্রী ক্লাস করে না, কাজ জমা দেয় না বলে ক্লাস-টিচারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছিলাম। তাই ওই ছাত্রীর কাছে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চেয়েছিলাম।” বন্ধ ঘরে নয়, সহকর্মীদের সামনেই তিনি কথা বলেছেন বলেও তাঁর দাবি। একই সঙ্গে গৌতমবাবুর বক্তব্য, “ওই ছাত্রীর সম্পর্কে শিক্ষকের অভিযোগ নিয়ে ওর বাবার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি। তার এই ব্যাখ্যায় আমি মর্মাহত।”

কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী। তিনি জানান, রবিবারই শিশিরবাবুর অফিসে গিয়ে গৌতমবাবু সম্পর্কে সব জানান তিনি। সে সময় দফতরে ভবনের অন্য শিক্ষকেরাও ছিলেন। ছাত্রীর দাবি, “শিশিরবাবু মিডিয়ার কাছে না গিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।” শিশিরবাবুর সঙ্গে এ দিন বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

এর আগে ভিন্ রাজ্যের প্রথম বর্ষের ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ধামচাপার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল কলাভবনের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই ঘটনায় শিশিরবাবুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিশ্বভারতীরই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি। জেলা পুলিশের এক কর্তা এ দিন বলেন, “৩০ অগস্ট বিশ্বভারতীকে জমা দেওয়া বিশাখা কমিটির অন্তর্বর্তী রিপোর্ট হাতে এসেছে। তাতে কলাভবনের অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কমিটি।” সোমবার এগ্জিকিউটিভ কমিটির বৈঠকেও অধ্যক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক সদস্য। প্রশ্ন, রিপোর্ট পেয়েও কেন কলাভবনের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? উপাচার্যের মুখপাত্র সন্দীপ বসু সর্বাধিকারীকে এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হলে, ফোন ধরেননি। রাত পর্যন্ত জবাব দেননি এসএমএসেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE