Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পুরসভার চেক ও নথি নিয়ে যাওয়ার নালিশ

আটক পুরুলিয়ার বিধায়ক

বিধানসভা ভোট পেরিয়েছে বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গে পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়কের সংঘাত থামার কোনও লক্ষণ নেই।

থানায় ঢোকার আগে। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

থানায় ঢোকার আগে। শুক্রবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

বিধানসভা ভোট পেরিয়েছে বছর ঘুরতে চলল। কিন্তু, তৃণমূলের সঙ্গে পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়কের সংঘাত থামার কোনও লক্ষণ নেই।

পুরভবনে এসে পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানকে না পেয়ে পুরসভার চেকবই ও একাধিক নথি নিয়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠল পুরুলিয়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা স্থানীয় বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। শুক্রবার এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলর বিধায়ককে গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে হাসপাতাল মোড় অবরোধ করেন। থানায় অভিযোগও হয় বিধায়কের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনাকে শহর জুড়ে ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনার সূত্রপাত দুপুরে। অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিন দুপুরে হঠাৎই বিধায়ক এসে আমাদের বলেন, পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। পুরসভার বোর্ড মিটিংও হচ্ছে না। তা হলে আমাদের কথা কার কাছে জানাব?’’ তাঁর দাবি, এর পরেই বিধায়ক কয়েকটা চেক বই ও কিছু কাগজপত্র তুলে নিয়ে চলে যান। তবে ওই চেকগুলিতে কারও সই নেই।

পুরুলিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জেতার পর থেকেই বিধায়ক সুদীপবাবুর সঙ্গে পুরুলিয়া শহর তৃণমূলের সম্পর্ক আদায় কাঁচকলায়। নানা বিষয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন সুদীপবাবু। তা নিয়ে শাসকদলের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়িয়েছেন তিনি।

সেই সুদীপবাবুই পুরসভা থেকে চেকবই ও কাগজপত্র নিয়ে চলে গিয়েছেন খবর পেয়ে শহরের প্রায় সমস্ত তৃণমূল কাউন্সিলরই পুরসভায় চলে আসেন। দাবি তোলেন, এখনই বিধায়ককে গ্রেফতার করার। তৃণমূলের পুরপ্রধান কে পি সিংহদেও অসুস্থতার কারণে নিয়মিত পুরসভায় আসছেন না। তাঁর কাছেও খবর যায়। তিনি সব শুনে সবুজ সঙ্কেত দিতেই পুরসভার প্রধান করণিক অনিমেষ ভট্টাচার্য পুরুলিয়া সদর থানায় গিয়ে বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ হওয়ার পরই তৃণমূলের কাউন্সিলর ও কর্মীরা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে হাসপাতাল মোড় অবরোধ করেন। ব্যস্ত সময়ে হঠাৎ অবরোধে কিছুটা ভোগান্তি হয় স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অনেক মানুষের। পুরুলিয়া শহর তৃণমূল সভাপতি তথা কাউন্সিলর বৈদ্যনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিধায়ক এ ভাবে পুরসভায় ঢুকে চেকবই তুলে নিয়ে গিয়ে বেআইনি কাজ করেছেন। তিনি গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।’’ বিক্ষোভ ছড়াতে শুরু করেছে দেখে পুলিশ আসরে নামে।

ঘটনাচক্রে সুদীপবাবু সে সময় পুরুলিয়া স্টেশনে তৃণমূলেরই সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের ডিআরএমের সঙ্গে রেলের একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। সাংসদ-বিধায়ককে পাশাপাশি হাসিমুখে কথা বলতেও দেখা যায়। কিন্তু, স্টেশন থেকে বেরনোর মুখেই পুলিশ কংগ্রেস বিধায়ককে আটক করে। অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে আটক করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়।

সুদীপবাবু পরে বলেন, ‘‘পুরসভায় গিয়ে পুরপ্রধান, উপপুরপ্রধান কাউকে পাচ্ছি না। বোর্ড মিটিংও হচ্ছে না। বিরোধী দলনেতা হয়ে তা হলে আমাদের কথা কাকে বলব?’’ তাঁর অভিযোগ, পুরসভায় যে সমস্ত অর্থ আসছে, তা কী ভাবে খরচ হচ্ছে জানানো হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘প্রশাসন-সহ পুরমন্ত্রীর নজর টানতেই চেকবই তুলে এনেছি। ওই চেকবইগুলি তো আমার কোনও কাজে লাগবে না। ফেরতও দিয়ে দেব।’’ শাসকদলের অবশ্য প্রশ্ন, প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের অন্য অনেক উপায় আছে। এ ভাবে পুরসভায় ঢুকে জোর করে চেকবই বা নথিপত্র নিয়ে যাওয়া পুরোপুরি আইন-বিরুদ্ধ। রাত পর্যন্ত থানায় আটকে ছিলেন বিধায়ক। তাঁর বিরুদ্ধে থানার বাইরে শ্লোগান দিয়েছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

MP Sudip Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE