Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জৈব পণ্য সত্যিই কি জৈব, প্রশ্ন সব মহলে

বলা হচ্ছে জৈব, অর্গানিক। প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে ফলানো। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?একটি দোকানের নামই দেওয়া হয়েছে ‘প্রাকৃতিক’। চাল, ডাল, আনাজ, ফল-সহ যে-সব সামগ্রী সেখানে বিক্রি হচ্ছে, তার কিছুই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে ফলানো হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৩১
Share: Save:

বলা হচ্ছে জৈব, অর্গানিক। প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে ফলানো। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই?

একটি দোকানের নামই দেওয়া হয়েছে ‘প্রাকৃতিক’। চাল, ডাল, আনাজ, ফল-সহ যে-সব সামগ্রী সেখানে বিক্রি হচ্ছে, তার কিছুই রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে ফলানো হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা। তাঁদের দাবি, ওগুলো সবই জৈব পণ্য। একটি নামী পোশাক বিপণির চেন কয়েক বছর ধরে একই রকম ‘জৈব’ শস্য ও তৈরি খাবার বিক্রি করছে। শপিং মলের খুচরো বিপণিতেও প্যাকেটে মোড়া জৈব আনাজ, শস্যের ছড়াছড়ি। জৈব, ‘অর্গানিক’ জিনিস কিনতে ঝোঁক বেড়েছে মানুষের। কিন্তু জৈব বলে সর্বত্র যা বিক্রি হচ্ছে, তার সব সত্যি সত্যিই জৈব কি না, সেই ব্যাপারে সন্দিহান রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা দফতর।

আপাতত ঠিক হয়েছে, কৃষি দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ক্রেতা সুরক্ষা দফতর জৈব জিনিস চেনার জন্য কোনও ছাপ বা চিহ্ন চালু করবে, যাতে ক্রেতারা না-ঠকেন।

এমনিতে প্যাকেটের গায়ে ‘ইন্ডিয়া অর্গানিক’ বলে ছাপ মারা থাকলে সেই সামগ্রী সারা দেশে জৈব বা প্রাকৃতিক বলে স্বীকৃত। তবে সেই শংসাপত্র পাওয়াটা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। নামী বিপণি যা পারবে, অল্প পুঁজি নিয়ে কাজে নামা কৃষক বা ব্যবসায়ীরা সেটা পারবেন না।

জৈব জিনিসের শংসাপত্র দেবে, পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের কোনও নিজস্ব সংস্থা বা ‘সার্টিফিকেশন এজেন্সি’ এখনও তৈরি হয়নি বলে জানাচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তা হলে কী ভাবে বোঝা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে ফলা কোন ফসল জৈব?

‘‘বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খড়্গপুর আইআইটি পরীক্ষা করে দেখে শংসাপত্র দেয়। সার্টিফিকেশন এজেন্সি না-হলেও তাদের শংসাপত্র থাকলে নিশ্চিন্তে সেই জিনিস কেনা যেতে পারে,’’ বলছেন পূর্ণেন্দুবাবু।

রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানাচ্ছেন, সাধারণ ক্রেতার জন্য এমন কোনও ছাপ বা চিহ্নের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে সেটা দেখে তবেই তাঁরা নিশ্চিন্তে জৈব জিনিস কিনতে পারেন। ‘‘অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে ক্রেতাকে ঠকাতে না-পারেন, তেমন একটা ব্যবস্থা চাই,’’ বলছেন সাধনবাবু। দেড় যুগ আগে জৈব সারের নামে কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য প্যাকেটে ভরে বিক্রির প্রবঞ্চনা ধরে ফেলেছিল পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিয়েছিল তারা।

আবার নিষ্ঠাভরে জৈব উপকরণ দিয়ে চাষ করলেও ফলন হিসেবে যে-শস্য মিলবে, তা ‘জৈব’ না-ও হতে পারে। গত বছর জার্মানিতে পাঠানোর জন্য দক্ষিণবঙ্গের এক কৃষক তাঁর খেতের চাল পরীক্ষা করিয়ে দেখেন, তা রাসায়নিক সার আর কীটনাশকে ভর্তি! অথচ তিনি উপকরণ ব্যবহারের দিক থেকে জৈব চাষই করেছিলেন। তাঁর উৎপাদিত পণ্য তা হলে জৈব হল না কেন? রহস্যভেদ হয় পরে। বোঝা যায়, পাশের খেতে দেওয়া তীব্র রাসায়নিক সার ও কীটনাশক জলে মিশে তাঁর খেতে চলে এসেছিল। তাই তাঁর খেতের শস্যও আর ‘জৈব’ থাকতে পারেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organic product
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE