শিলাবতী নদীতে ধ্বংসাবশেষ দেখছেন এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।
শিলাবতী নদীর বুকে জেগে ওঠা একটি ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে গড়বেতার রাজবল্লভপুরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কৌতূহলে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন নদীর পাড়ে।
বর্ষার জলে পুষ্ট শিলাবতীতে শীতে জলের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। নদীর যে অংশে ওই ধ্বংসাবশেষ মিলেছে, তার আশপাশের এলাকাতেও জলস্তর কম। স্থানীয় প্রবীণদের মুখে ধ্বংসাবশেষকে ঘিরে ইতিমধ্যেই ঐতিহাসিক নানা ব্যাখ্যা শোনা গেলেও সেটি আসলে কী তা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় আসেন গড়বেতা-১ এর যুগ্ম বিডিও বিশ্বনাথ ধীবর। আসেন স্থানীয় সন্ধীপুর পঞ্চায়েতের প্রধান আঙুর মহাদণ্ড। আসে গড়বেতা থানার পুলিশও। আপাতত এলাকাটি নজরে রেখেছে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসন। যুগ্ম বিডিও বলেন, “বিষয়টি জেলায় জানাব। পুরাতত্ত্ব বিভাগেও খবর দেওয়া হবে।”
জেলার ইতিহাস নিয়ে চর্চা করেন এমন কয়েকজনের মতে, এই সব এলাকায় আগে নীলকর সাহেবদের আনাগোনা ছিল। রাজবল্লভপুর গ্রাম সংলগ্ন মালবাঁদিতে ছিল নীলকুঠি। ফলে নদীর বুকে জেগে ওঠা ওই ধ্বংসাবশেষ নীলকর সাহেবদের আস্তানা হতে পারে। আবার কারও মতে, নদীর গতিপথ পাল্টানোর কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া কোনও বাড়ির কাঠামোর জেগেও ওঠাও অসম্ভব নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরেই শিলাবতীর বুকে পুরনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ মেলার খবর ছড়িয়েছিল। বুধবার স্থানীয় কয়েকজন সাঁতরে ধ্বংসাবশেষের কাছে যান। দেখা যায় বেশ অনেকটা এলাকা জুড়েই রয়েছে ইটের দেওয়াল। ছোট সাইজের চুন-সুরকির গাঁথা ইট দেখলে বোঝা যায় তার বয়স বেশ পুরনো।
গড়বেতার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চর্চা করছেন ফতেসিংহপুরের বাসিন্দা তারাশঙ্কর ভট্টাচার্য। তারাশঙ্করবাবুর অনুমান, “একসময় এখানে নায়েক বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বগড়ীর রাজা ছত্রসিংহের প্রধান সেনাপতি অচল সিংহ। তখন যত্রতত্র গড়ে উঠেছিল গোপনঘাঁটি। সেই সব ঘাঁটি থেকেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই চলত। তার সঙ্গে এই ধ্বংসাবশেষের যোগ থাকতে পারে।’’ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক মঙ্গলপ্রসাদ মাইতির অনুমান, “স্থানীয় বলদঘাটা গ্রামের তৎকালীন জমিদার কালাচাঁদ সামন্ত দ্বাদশ শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে তার সিংহভাগই নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। তার কোনও একটির ধ্বংসাবশেষও হতে পারে। তবে এর পিছনে যে ইতিহাসই থাকুক না কেন, প্রশাসন সঠিক তথ্য উদঘাটনে উদ্যোগী হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy