Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পেট্রোল নিয়ে হাইকোর্টে! কী করছিল পুলিশ

ওই পুলিশকর্তাকে সমর্থন করছেন আইনজীবী কল্লোল বসু ও মহম্মদ আরফিন। কল্লোলবাবুরাই এ দিন বৃদ্ধের হাত থেকে পেট্রোলের বোতল ও লাইটার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।

দিশাহারা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে গণেশ মাঝি। নিজস্ব চিত্র

দিশাহারা: মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে গণেশ মাঝি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এজলাসে বৃদ্ধের আত্মহত্যার চেষ্টা হাইকোর্টের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। এক বৃদ্ধ পেট্রোলের বোতল নিয়ে কী করে মঙ্গলবার ওই এজলাসে ঢুকে পড়লেন, উঠছে সেই প্রশ্ন।

লালবাজারের একাংশের বক্তব্য, হাইকোর্টের এজলাসে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থীদের ব্যাগ নিয়ে ঢোকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ দিন ওই বৃদ্ধের হাতে ব্যাগ ছিল না। তিনি পাঞ্জাবির পকেটে প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল নিয়ে ঢুকে থাকতে পারেন বলে পুলিশের অনুমান। তবে ওই বৃদ্ধের দাবি, পেট্রোলের বোতল ছিল তাঁর হাতেই। তাঁকে বোতল নিয়ে ঢুকতে নিষেধ করেনি কেউ।

হাইকোর্টের ১২টি মেটাল ডোর ফ্রেম ডিটেক্টরে সেই বোতল ধরা পড়ল না কেন, প্রশ্ন আইনজীবীদের। হাইকোর্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লালবাজারের এক কর্তা জানান, মেটাল ডিটেক্টরে প্লাস্টিকের বোতল ধরা পড়ে। কিন্তু বোতলে কী আছে, তা দেখা যায় না। অনেক বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীর ব্যাগে জলের বোতল থাকে। ওই কর্তা বলেন, ‘‘তা হলে তো প্রত্যেককে খুঁটিয়ে তল্লাশ করে তবেই হাইকোর্টে ঢুকতে দিতে হয়। সে-ক্ষেত্রে শুনানিতে সময়মতো হাজির হতে দেরি হয়ে যাবে বলে যুক্তি দেখিয়ে তল্লাশির প্রতিবাদ করবেন আইনজীবীদের একাংশই।’’

আরও পড়ুন: ভরা কোর্টে আত্মাহুতির চেষ্টা বৃদ্ধের

ওই পুলিশকর্তাকে সমর্থন করছেন আইনজীবী কল্লোল বসু ও মহম্মদ আরফিন। কল্লোলবাবুরাই এ দিন বৃদ্ধের হাত থেকে পেট্রোলের বোতল ও লাইটার ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁরা জানান, হাইকোর্টের যে-সব গেট দিয়ে কৌঁসুলিরা ঢোকেন, সেখানে সকালের ব্যস্ত সময়ে দেহ বা ব্যাগ তল্লাশির ব্যবস্থা হলে আদালতে ঢুকতে দেরি হবেই, সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির।

হাইকোর্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য এক পুলিশকর্তা জানান, ১২টি মেটাল ডোর ফ্রেম ডিটেক্টর ছাড়াও ওখানে আছে ৩৬টি সিসিটিভি। ৭৮টি সিসিটিভি বসানোর কথা আছে। হাইকোর্টে ২৪ ঘণ্টার সুরক্ষার দায়িত্বে আছেন ৩০০ পুলিশকর্মী। কয়েক মাস আগে কোর্টের একটি ভবনে আগুন লাগে। তার পরে পুলিশ ও দমকলের বৈঠকে হাইকোর্টের অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজার পরিকল্পনা করা হয়। কাজও শুরু হয়েছে।

ওই কর্তার বক্তব্য, হাইকোর্টের নিরাপত্তা দেখার জন্য আছেন তিন বিচারপতি। নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত লালবাজারের সঙ্গে বৈঠক করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। বিচারপতিরা বৃদ্ধের কাণ্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বলে ওই কর্তার দাবি। তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রেও এ দিনের ঘটনা নিয়ে পুলিশকর্মীদের তিরস্কার করেননি।

যাঁর আত্মাহুতির চেষ্টাকে ঘিরে এত প্রশ্ন, এত জল্পনা, সেই গণেশ মাঝি জমি থেকে উচ্ছেদের মামলায় নিম্ন আদালতে হেরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এবং সেখানেও হেরে যান। তা হলে আত্মহত্যার চেষ্টা কেন?

বৃদ্ধের অভিযোগ, ‘‘বিচারের নামে প্রহসন চলে। প্রোমোটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিছু আইনজীবী আমাকে হারিয়ে দিয়েছেন। আমার আর কী-ই বা করার আছে? আত্মহত্যা ছাড়া!’’ গণেশবাবুর স্ত্রী, বিবাহিত মেয়ে মারা গিয়েছেন। ছেলে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। নাতনি (মেয়ের মেয়ে) থাকে মামার কাছে।

গণেশবাবু যে-কারখানার কর্মী ছিলেন, বীরেন রায় রোডে সেই কারখানার কাছে গিয়েই চোখে পড়ল, ফুটপাথে বৃদ্ধের ঝুপড়ি। পলিথিনে মোড়া কাঠের তক্তায় ভোটপ্রচারের ফ্লেক্সের ‘বিছানা’। পড়শি মমতা দাস, চা বিক্রেতা কার্তিক গায়েনরা কোর্টের কাণ্ড শুনে অবাক। প্রোমোটারের সঙ্গে বৃদ্ধের দীর্ঘদিনের টক্কর অবশ্য ওই তল্লাটে বেশ পুরনো খবর।

বৃদ্ধকে তাঁর পাড়ায় ফেরত পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে রাত পর্যন্ত দোলাচলে ছিল পুলিশ। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেছেন। তাঁর নির্দেশ, বৃদ্ধের অবসাদ কাটাতে চিকিৎসা করাতে হবে, তাঁকে পাঠাতে হবে পরিবারের কাছে। বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE