Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশকে ধুলো দিয়ে কী ভাবে দিল্লি গেলেন গুরুঙ্গ?

তাঁর জন্য গত ছ’মাস ধরে ওত পেতে ছিলেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। তাঁকে ধরতে রঙ্গিত নদীর তীরে লিম্বু বস্তিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক। কিন্তু এত করেও তাঁকে ধরা গেল না। রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে দিল্লি চলে গেলেন বিমল গুরুঙ্গ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩২
Share: Save:

তাঁর জন্য গত ছ’মাস ধরে ওত পেতে ছিলেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। তাঁকে ধরতে রঙ্গিত নদীর তীরে লিম্বু বস্তিতে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক। কিন্তু এত করেও তাঁকে ধরা গেল না। রাজ্য পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে দিল্লি চলে গেলেন বিমল গুরুঙ্গ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে তিনি আত্মপ্রকাশ করলেন বটে, কিন্তু অন্তত মাসখানেক আগেই তিনি সেখানে গিয়ে পৌঁছেছেন বলে খবর।

গুরুঙ্গ কী ভাবে দিল্লি পৌঁছলেন, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। চর্চার কারণ সঙ্গত। সিআইডি তাঁর নামে লুক আউট নোটিস জারি করে রেখেছিল। উদ্দেশ্য, কোনও ভাবেই তিনি যেন বিদেশ চলে যেতে না পারেন। সিআইডি যেমন গুরুঙ্গ ও তাঁর সঙ্গীদের ফোনে নিয়মিত আড়ি পাতছিল, তেমনই সিকিমগামী সড়কের উপরও নজর ছিল। গুরুঙ্গের সিকিমের আস্তানাতেও কয়েক বার ঘুরে এসেছিল সিআইডির বিশেষ বাহিনী। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে বাগে পাওয়া যায়নি।

গোয়েন্দারা এখন মনে করছেন, মূলত তিনটি রাস্তা ব্যবহার করে গুরুঙ্গ দিল্লি গিয়ে থাকতে পারেন। লুক আউট নোটিস জারি হলেও দেশের মধ্যে কোনও বিমানবন্দরে যাতায়াতে গুরুঙ্গের উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ফলে কারও কারও মতে, গ্যাংটক থেকে হেলিকপ্টার করে গুরুঙ্গ বাগডোগরায় এসে সেখান থেকে দিল্লির উড়ান ধরে থাকতে পারেন। গ্যাংটক হেলিপ্যাড বা বাগডোগরা বিমানবন্দরে রাজ্য পুলিশের ঢোকার সুযোগ নেই। কারণ, বিমানবন্দরের ভিতরের নিরাপত্তা সিআইএসএফের হাতে। গ্যাংটকের কপ্টার পরিষেবাও চলে নিয়মিত। ফলে এটিই সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ রাস্তা বলে রাজ্যের গোয়েন্দারা মনে করছেন।

পুলিশের খবর, বিমলকে শেষ দেখা গিয়েছে নামচি বাজারে মনোহর ভবনের ঠিক পাশে নায়ুমা হোটেলে। নিতান্ত সাদামাঠা এবং ভরা বাজারের মধ্যে অবস্থিত এই হোটেলটির মালিক সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংলের শ্যালক বি বি রাই বলে জেনেছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। যদিও সেই তথ্যের সত্যতা তাঁরা যাচাই করতে পারেননি। সেই হোটেল থেকে বেরিয়ে দার্জিলিঙের সুখিয়াপোখরি হয়ে সহজেই যাওয়া যায় সীমানা-পশুপতি ফটকে। সেখান থেকে বীরগঞ্জের রাস্তা ধরে রক্সৌল পৌঁছনোও কঠিন কাজ নয়। এ জন্য নেপালের ভিতর দিয়েও বেশি রাস্তা যেতে হয় না। রক্সৌল থেকে সোজা সড়কপথে দিল্লি যাওয়া সহজ ব্যাপার। আবার দার্জিলিং থেকে নেপালের মধ্যে দিয়ে গিয়ে পোখরা-সুনাউলি সীমান্ত দিয়েও গোরক্ষপুর বা বারাণসী গিয়ে থাকতে পারেন গুরুঙ্গ। সেখান থেকেও দিল্লি পৌঁছনো সহজ।

রাজ্যের কর্তারা মনে করছেন, বিমলের দিল্লি যাত্রা কোনও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সির সাহায্যে হয়ে থাকতে পারে। দিল্লি বা নয়ডাতে তাঁকে ‘সেফ হাউসে’ রাখা হয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। পাহাড় এখন শান্ত এবং মুখ্যমন্ত্রীও দার্জিলিঙে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সময় বুঝেই তাঁকে প্রকাশ্যে এনে ফের রাজনীতি শুরু করা হল, মত নবান্নের। যদিও কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির সাফ কথা, গুরুঙ্গের দিল্লি যাত্রার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE