মৃত: কাজলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে।—নিজস্ব চিত্র।
স্বাস্থ্য ভবনে শুক্রবার যে ধুন্ধুমার চলল, মারাও গেলেন এক জন— তাতে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই তাণ্ডব? কর্মীদের ক্ষোভটা কি নিছক অন্যত্র কাজে পাঠানো নিয়ে, নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ?
স্বাস্থ্য দফতরের ৬৭ জন আপার ডিভিশন ক্লার্ক (ইউডিসি)-এর ‘ডিটেলমেন্ট’ এর নির্দেশ হয়েছে। স্বাস্থ্যভবন থেকে বেশির ভাগকেই কলকাতার মধ্যেই কয়েকটি মেডিক্যাল কলেজে, স্বাস্থ্য কমিশন ও হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। দু’জন যাচ্ছেন আলিপুরদুয়ারে। প্রশ্ন উঠেছে, বিক্ষোভ জানাতে গিয়ে কর্মীরা কেন এতটা মারমুখী হয়ে উঠবেন, যাতে র্যাফ ডাকতে হয়!
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে এ দিন কিছু বিষয় সামনে এসেছে, যেগুলি এই বিস্ফোরক অবস্থা তৈরির কারণ বলে সন্দেহ করছেন স্বস্থ্যকর্তাদের একাংশ। এক প্রবীণ স্বাস্থ্যকর্তা যেমন বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। তাতে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ইউডিসি রয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। অথচ, কাজের সময়ে লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই একটু অদলবদল করা হয়েছে। যেখানে কাজ রয়েছে সেখানে কিছু লোককে পাঠানো হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ‘আমি সংখ্যালঘুদের পক্ষে, ওদের বাদ দিয়ে কাজ করতে পারব না’
ওই স্বাস্থ্যকর্তার মতে, প্রতিটি বিভাগে কর্মীদের অদলবদল করতে হয়, তা না-হলে দুর্নীতি শিকড় ছড়ায়। তাঁর ইঙ্গিত স্পষ্ট, স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরে অনেক জায়গায় ঘুঘুর বাসা তৈরি হয়েছে। সেটা ভাঙার তৎপরতা শুরু হতেই এতটা উন্মত্ত বিক্ষোভ।
অন্য এক কর্তা আরও স্পষ্ট ভাবে বিষয়টির ব্যাখ্যা করেন, ‘‘যে-যে বিভাগ থেকে কর্মীদের ডিটেলমেন্ট-এ পাঠানো হয়েছে সেটা খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বেশি লোক তোলা হয়েছে অ্যাকাউন্টস, অডিট-অ্যাকাউন্টস-ভেরিফিকেশন, কিডনি বোর্ড, ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট, মেডিক্যাল এস্টাবলিশমেন্টের মতো জায়গা থেকে। কারণ, এই সবগুলিই হল ‘মধুর’ জায়গা। যেখান থেকে চাইলে অনেক উপরি রোজগার হতে পারে। তা না হলে, কলকাতারই এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে গিয়ে অন্য কাজ করতে এত আপত্তি কীসের?’’
এই ব্যাখ্যা শুনে অবশ্য দলমত নির্বিশেষে সরকারি কর্মীদের সংগঠনগুলি নিন্দা আর ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী ফেডারেশন হোক কিংবা সিপিএম প্রভাবিত কোঅর্ডিনেশন কমিটি, বিজেপি-র সরকারি কর্মচারী পরিষদ কিংবা নকশালপন্থী পশ্চিমবঙ্গ কর্মচারী ইউনিয়ন (নবপর্যায়)—সকলের দাবি, কর্মীরা সবাই সৎ।
তৃণমূলপন্থী রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের তরফে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মা সৎ লোকগুলোকে সরিয়ে কিছু চুক্তির ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে অনৈতিক কাজকর্ম করতে চাইছেন। কোঅর্ডিনেশন কমিটির বিজয়শঙ্কর সিংহের মতে, ‘‘এই সরকার কর্মচারী কমিয়ে পুরো ব্যবস্থাটা ভেঙে ফেলবে।
স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা নিজে থেকে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলেননি এ দিন। অনেক চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy