প্রতীকী ছবি।
হাতে তুরুপের একটা তাস পেয়ে গেল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আগামী বছরই দেশে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে এ বছরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনও বটে। কিন্তু সম্প্রতি রেলের তরফে রাজ্য সরকারকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে ওই নির্বাচনগুলিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ আরও দৃঢ় ভাবে তোলা যাবে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত।
আটটি স্বল্প দূরত্বের শাখা রেলপথ তুলে দেওয়ার ব্যাপারে সম্প্রতি রাজ্য সরকারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই তৃণমূল ওই ‘সুযোগ’ পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমেই জানানো যেতে পারে, এটা কিন্তু নতুন কোনও ব্যাপার নয়। বরং দীর্ঘ দিন ধরেই অর্থকরী ভাবে অলাভজনক রেললাইনগুলি তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, অতীতে যেমন এ রকম কিছু ঘটেনি এখনও একই অবস্থা চলবে।
যে আটটি রেলপথের উল্লেখ চিঠিতে আছে, মজার কথা হচ্ছে, তার মধ্যে বর্ধমান-কাটোয়া লাইনে রেল ন্যারো গেজকে বর্ড গেজে পরিণত করার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করেছে। অতি সম্প্রতি ওই লাইনে ইএমইউ ট্রেনও চালু করা হয়েছে। অতীতেও এ সব নিয়ে আলোচনা হলেও তা ফলপ্রসূ যে হয়নি তার কারণ, রেল প্রশাসন সম্যক ভাবে ওয়াকিবহাল ছিল— ওই শাখালাইনগুলো কখনই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, যে জায়গাগুলি দিয়ে ওই রেললাইন গিয়েছে, সেখানকার জনজীবন সম্পূর্ণ ভাবেই রেলের উপর নির্ভরশীল।
উদাহরণ হিসাবে ক্যানিং-সোনারপুর লাইনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ক্যানিং থেকে কলকাতা অর্থাৎ শিয়ালদহ পৌঁছতে গেলে ট্রেন ছাড়া অন্য যানবাহনের উপর সাধারণ মানুষের পক্ষে নির্ভর করা কখনই সম্ভব নয়। তার প্রথম কারণ দূরত্ব। আর দ্বিতীয় কারণ, সড়ক যানবাহনের অপ্রতুলতা। এবং যা ব্যয় সাপেক্ষও বটে। ক্যানিং থেকে শাক-সব্জি শহরের বাজারে সময় মতো জোগান দেওয়া ট্রেন ছাড়া এক প্রকার প্রায় অসম্ভব। একই রকম ভাবে বারাসত-হাসনাবাদ, শান্তিুপুর-নবদ্বীপ, বারুইপুর-নামখানা— এই সব পথে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে রেল ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে।
রেল প্রশাসনও জানে, রেলপথ বন্ধ করতে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে অসন্তোষ বা প্রতিবাদ তৈরি হবে তা সামলানো সম্ভব নয়। তবে, এ বারের চিঠিতে রেল নতুন এক পয়েন্ট জুড়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকার মনে করলে ওই আটটি লাইনে রেলের ক্ষতির অর্ধাংশ বহন করতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে রেল। আগের চিঠিগুলিতে এ জাতীয় কোনও উল্লেখ কিন্তু থাকত না। যদিও এটাও উল্লেখ্য, সম্প্রতি রেল সব নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারগুলিকে অর্ধেক ব্যয়ভার বহন এবং জমি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছে। সেই নিয়ম মেনেই এই নতুন অর্ধাংশ ব্যয়বহনের কথা বলা হয়েছে বলে রেলের অনেকে মনে করছেন।
আরও পড়ুন: লোকসানের ভাগ নিলে চলবে ট্রেন, চিঠি দিয়েও পিছোল রেল
রাজ্য সরকারের কাছে এই চিঠি এসেছে পূর্ব রেলের তরফে। কিন্তু, অন্যান্য আঞ্চলিক রেলেও এ জাতীয় অলাভজনক শাখা রেলপথ রয়েছে। আমাদের হাতের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলে কমপক্ষে পাঁচটি অলাভজনক শাখা রেলপথ রয়েছে। কয়েক মাস আগে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বাণিজ্যিক দফতরকে রেল বোর্ডের তরফে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে বলা হয়েছিল। যত দূর জানা গিয়েছে, তৎকালীন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য বাণিজ্যিক অধিক্ষক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেন, উক্ত শাখালাইনগুলির মধ্যে একটি স্বল্প দৈর্ঘের শাখায় আছে মোটে চারটি স্টেশন। যার মধ্যে একটি স্টেশনের টিকিট বিক্রির দৈনিক গড় আয় এমনই যে রেলপথ বন্ধ করা তো যায়ই না, বরং সেখানে টিকিট বিক্রির দৈনিক পরিমাণ বিচার করে তখনই কম্পিউটারাইজড রিজার্ভেশন অফিসের ব্যবস্থা করতে হয়। সে কথা তিনি চিঠিতে উল্লেখ করলে, বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
শুধু দক্ষিণ-পূর্ব নয়, উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলেও এ রকম বহু অলাভজনক শাখা রেলপথ রয়েছে। সমগ্র ভারতীয় রেলে যদি এই সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হলে বহু রেলপথই বাতিল করতে হয়। কিন্তু এর ফলে যে জনরোষ তৈরি হবে, তা সামলানো আদৌ সম্ভব যে হবে না, এ কথা জোরের সঙ্গেই বলা যায়।
এখানে আরও একটি বিষয় বলা প্রয়োজন, এই লাইনগুলিকে কিন্তু টিকিট বিক্রির নিরিখে অলাভজনক বলা হচ্ছে। রেলের অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, যথাযথ টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা, টিকিট পরীক্ষা এবং কতিপয় রেল কর্মচারীর দুর্নীতি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলে অলাভজনক শাখা লাভজনকেও পরিণত হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy