Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড় নিয়ে শান্তি-বার্তা রাজনাথ সিংহের

এ দিন সেই নীরবতা ভাঙলেন রাজনাথ। কিন্তু তাতে গুরুঙ্গদের সমর্থনের কোনও বার্তা ছিল না। টুইট করে রাজনাথ বলেন, ‘‘ভারতের মতো গণতন্ত্রে অশান্তির মাধ্যমে সমাধানসূত্র মেলে না। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।’’

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৭ ০৩:৫২
Share: Save:

এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্য দিকে বিমল গুরুঙ্গ। দুই চাপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আজ অবশেষে দার্জিলিঙের হিংসা নিয়ে মুখ খুলল কেন্দ্রীয় সরকার। এ দিন সকালে মমতার সঙ্গে কথা বলার পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ পরপর চারটি টুইট করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান।

পাহাড়ের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে গুরুঙ্গরা চাইছেন, ত্রিপাক্ষিক আলোচনা ডাকুক কেন্দ্র। আর বিজেপি দল হিসেবে পাশে দাঁড়াক। কারণ, প্রায় দশ বছর তাঁরা বিজেপির শরিক। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি যে ইস্তাহারটি তৈরি করে, সেখানে গোর্খাল্যান্ড সম্পর্কে কিছুই বলা ছিল না। শেষ মুহূর্তে গুরুঙ্গের চাপেই গোর্খাল্যান্ডের প্রতি নীতিগত সমর্থনের কথা ঢোকানো হয়। সেই গুরুঙ্গের নেতৃত্বে গত ৮ জুন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের সময়ে প্রথম অশান্ত হয় পাহাড়। তার পর থেকে দশ দিন দিল্লি থেকে কোনও সরাসরি বার্তা শোনা যায়নি। এর মধ্যে গত শুক্রবার মমতা-রাজনাথ কথা হয়েছে। আবার সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে সঙ্গী করে রাজনাথের সঙ্গে দেখা করেন মোর্চা নেতা রোশন গিরি। এমনকী, প্রথমে দশ কোম্পানি আধা সেনা দিয়ে দিলেও দ্বিতীয় বার রাজ্যের কাছ থেকে লিখিত আর্জিও চেয়েছিল কেন্দ্র।

এ দিন সেই নীরবতা ভাঙলেন রাজনাথ। কিন্তু তাতে গুরুঙ্গদের সমর্থনের কোনও বার্তা ছিল না। টুইট করে রাজনাথ বলেন, ‘‘ভারতের মতো গণতন্ত্রে অশান্তির মাধ্যমে সমাধানসূত্র মেলে না। পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকটি সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।’’ এবং এ-ও বলেন, ‘‘উপযুক্ত পরিবেশে সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষ সমস্ত মতপার্থক্য কথার মাধ্যমে দূর করুক।’’ কেন্দ্র এই আলোচনায় পক্ষ হবে, সে কথাও তিনি কোথাও বলেননি।

“দার্জিলিং এবং তার আশপাশের মানুষের কাছে আমার আবেদন, শান্ত থাকুন। আজ সকালে মমতার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি দার্জিলিঙের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন।” —রাজনাথ সিংহ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। (পাহাড়ে অশান্তি নিয়ে)

এই কথায় কেন্দ্র এবং দল হিসেবে বিজেপির অবস্থান নিয়েই সংশয়ে মোর্চা। এ দিন দার্জিলিঙে মোর্চা বিধায়ক অমর সিংহ রাই সে কথাই বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র কী করছে, আমি বুঝতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও কিছু হয়নি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বিজেপি স্পষ্ট বলুক, আমাদের দাবি নিয়ে তাদের কী মত?’’

পাহাড়ের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রচার সভাতেও ছিলেন গুরুঙ্গ। কিন্তু দার্জিলিং নিয়ে সেই পুরনো অবস্থান থেকে সরে এসেছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা বাংলা ভাগের পক্ষে নন। সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহও জানিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড নিয়ে তাঁরা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি।

আরও পড়ুন:থমথমে পাহাড় জুড়ে শোকমিছিল

শোকযাত্রা: নিহত মোর্চা সমর্থকের দেহ নিয়ে মিছিল। রবিবার দার্জিলিঙে। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপির এই পিছু হটার কারণ? তাঁরা বুঝতে পারছেন, পাহাড়ে অশান্তির ছবিতে উত্তরবঙ্গের সমতলে তো বটেই, দক্ষিণবঙ্গেও ঘর মজবুত করছে তৃণমূল। এই নিয়ে বিজেপি যত তৃণমূলকে খুঁচিয়ে বিবৃতি দেবে, ততই মমতার লাভ। সে ক্ষেত্রে ‘বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ভাগ করতে চায়’— এই প্রচার চালিয়ে উল্টে ফায়দা তুলবেন তিনি। তখন পাহাড়ের একটি আসনের জন্য বাকি ৪১টি লোকসভা আসন নড়বড়ে হয়ে যাবে বিজেপির কাছে। তৃণমূল তলে তলে এমন প্রচার শুরুও করেছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন, মোর্চার এই হিংসাত্মক আন্দোলনের পিছনে বিজেপির উস্কানি রয়েছে। তাই মমতার রাজনৈতিক প্যাঁচে প্রথম বারের জন্য ‘ব্যাকফুটে’ বিজেপি।

এমন পরিস্থিতিতেই আজ রাজনাথকে মমতার ফোন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ সম্পর্কে বলছে, ফোনে শনিবারের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চাকে যে উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরা মদত দিচ্ছে, তা-ও জানান। তার পরে টুইট করে রাজনাথ পাহাড়ের মানুষকে শান্ত থাকার আর্জি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE