Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ফেরার টানেই বিপদে পড়ল রমেশ

খবর পেয়ে ততক্ষণে আদালত চত্বরে হাজির হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী, ভাইয়ের বউ। পুলিশি ঘোরাটোপের মধ্যে থেকেই তাঁদের দিকে ভেসে এল নির্দেশ, একেবারে পরিষ্কার বাংলায়, ‘‘তিন, চার হাজার টাকা দিয়ে যেও। আর ওড়িশার বড় গামছা। হাওয়াই আর বেড শিট নিয়ে এসো। আমি কিন্তু ‘স্পেশাল’ খাবার খাব।’’ কথা শেষ করেই এ বার হিন্দিতে নির্দেশ, ‘‘যো বোলা, ও ভুলনা মৎ।’’

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০৪:৫২
Share: Save:

খবর পেয়ে ততক্ষণে আদালত চত্বরে হাজির হয়ে গিয়েছেন স্ত্রী, ভাইয়ের বউ।

পুলিশি ঘোরাটোপের মধ্যে থেকেই তাঁদের দিকে ভেসে এল নির্দেশ, একেবারে পরিষ্কার বাংলায়, ‘‘তিন, চার হাজার টাকা দিয়ে যেও। আর ওড়িশার বড় গামছা। হাওয়াই আর বেড শিট নিয়ে এসো। আমি কিন্তু ‘স্পেশাল’ খাবার খাব।’’ কথা শেষ করেই এ বার হিন্দিতে নির্দেশ, ‘‘যো বোলা, ও ভুলনা মৎ।’’

জিনস্, নীল শার্ট পরা শ্যামলা সুঠাম চেহারার এক যুবক দাদার ‘অর্ডার’ পেতেই কাজে লেগে পড়ল। ঘটনা মঙ্গলবারের। এ দিনই রমেশ মাহাতোকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। চুঁচুড়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ (‌স্পেশাল) পুলক তিওয়ারি তার পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এর পরেই সাকরেদদের উদ্দেশে ভেসে আসে নির্দেশ।

লকআপের খাবার অবশ্য মুখে রোচার কথাও নয় রমেশের। পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, প্রায় দেড়শো কোটি টাকার মালিক রমেশ। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তার সাম্রাজ্য। শুধু জমি নয়, অপরাধ জগতের এই মধ্যমণি প্রোমোটারদের থেকে তোলাবাজি, ভয় দেখিয়ে জমি লুঠের মতো ঘটনা হামেশাই ঘটায়। দাবি না মানলে ‘দানা’র বন্দোবস্ত। পুলিশের দাবি, বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে মাথায় এখন পর্যন্ত ৪০ থেকে ৪২টি মামলা ঝুলছে। যার মধ্যে খুনই অন্তত ১৮-২০। যে সব মামলার আবার সাক্ষী সাবুদ জোগাড় করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হচ্ছে তদন্তকারীদের।

তবে, নিজে লকআপে থাকলেও, বিশাল সাম্রাজ্য সামলাতে কোনও অসুবিধে নেই রমেশের। তার এক সাকরেদ জানায়, এর জন্য রয়েছে বিশ্বস্ত নেপু, আক্রম, চিকুয়া, বেনারসি বাপির মতো অনেকে। আর জেলে থাকলেও ‘বস’ তো আছেই। এ ছ়়াড়াও শাসকদলের কেষ্টবিষ্টুরা তো আছেই। তবে বিশ্বস্তদের কেউ কেউ এখন পুলিশের জালে। বাম আমলে রিষড়া অঞ্চলের এক সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ রমেশ রাজ্যে শাসকের বদল হতে নিজেও জার্সি বদলে ফেলে। তবে মাস দু’য়েক কিছুটা চাপে ছিল সে। হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জেলার দায়িত্বে আসার পর সেই চাপ আরও বাড়ে। পুলিশের তাড়ায় কখনও কলকাতার বালিগঞ্জ, কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা—একের পর এক ঠাঁই বদলে ফেলছিল সে। কিন্তু পুলিশ টাওয়ার লোকেশন পেয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত একেবারে মুম্বইয়ে পাড়ি দেয়। সেখান থেকে আমদাবাদের নাদিয়াল, কখনও বিহার। জায়গার মতোই পুলিশের নাগাল এড়াতে মুড়ি-মুড়কির মতো বদলেছে মোবাইলের সিমকার্ড।

কিন্তু ‘ঘরের টান’ই বিপদ বাড়াল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ramesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE