শুধু পরিষ্কার জলেই নয়। ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই মশা ময়লা জলেও ডিম পাড়ে। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ শাখার (ভেক্টর কন্ট্রোল বিভাগ) সমীক্ষাই এই তথ্য দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ঘোলাটে এবং নোংরা জলের নমুনায় পুরসভার পতঙ্গবিদেরা অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পেয়েছেন বলে দাবি।
পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘‘ট্রামলাইনের ধারে জমে থাকা ঘোলাটে নোংরা জল, প্লাস্টিকের প্যাকেটে জমে থাকা নোংরা কালো জলে অ্যানোফিলিস মশার লার্ভা পেয়েছি। সেটাই কাছে চিন্তার বিষয়।’’ এর ফলে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ আরও কঠিন হল বলেই মনে করছেন পতঙ্গবিদেরা। দেবাশিসবাবু বলেন, পরিবেশ যখন প্রতিকূল হয় তখন পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজেদের স্বভাব বদল করে পতঙ্গরা। তাই শীতে এবং প্রবল গ্রীষ্মে যখন পরিষ্কার জলের ঘাটতি দেখা যায়, তখন অ্যানোফিলিস মশারা যে কোনও জলের উৎস খোঁজে ডিম পাড়ার জন্য। তাই এই স্বভাব বদল।
ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা এডিস ইজিপ্টাই এখনও ময়লা জলে ডিম পাড়ার অভ্যাস করায়ত্ত করতে পারেনি বলে মনে করছেন পতঙ্গবিদেরা। কারণ যে সব এলাকা ডেঙ্গিপ্রবণ, সেখানেও নোংরা জলে এডিস মশার ডিম কিংবা লার্ভা পাননি পুরসভার সমীক্ষকেরা। তবে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক প্রাক্তন পতঙ্গবিদের মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে পরিবেশ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মশার জীবনচক্র বদলে যাচ্ছে, তাতে এডিসও যে ক’দিন পরে ময়লা জলে ডিম পাড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই।’’ পুরসভার সমীক্ষাতেই পরিষ্কার যে, এডিস মশার স্বভাবও বদলাচ্ছে। আগে ধারণা ছিল, এডিস মশা শুধু চার দেওয়ালের মধ্যে পরিষ্কার জলে ডিম পাড়ে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে চার দেওয়ালের বাইরে পরিষ্কার জমা জলেও ডিম পাড়ছে তারা। আর এডিস মশার ডিম পাড়ার জায়গা বেড়ে যাওয়াতেই এ বার ডেঙ্গি এতটা ছড়িয়েছে বলে মনে করছেন এপিডেমিওলজিস্টদের অনেকেই।
কেন্দ্রের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত এক এপিডেমিওলজিস্ট জানাচ্ছেন, ‘‘যে সব এলাকায় এ বার ডেঙ্গি বা ডেঙ্গির উপসর্গ থাকা জ্বর ছড়াচ্ছে, সেখানে সমীক্ষা চালানো দরকার। তা হলেই বোঝা যাবে ওই সব এলাকায় হঠাৎ রোগের সংক্রমণ বেড়ে গেল কেন।’’ এ ভাবে সমীক্ষা চালিয়েই শ্রীলঙ্কা ম্যালেরিয়ামুক্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy