Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শুধু শরীর নয়, আহত হয়েছে সল্টলেকের মন

ভোটের সময় মারামারি, বহিরাগতদের দাপাদাপি আগেও দেখেছে সল্টলেক। রিগিং, ছাপ্পা অপরিচিত নয় সে সবও। কিন্তু নির্বিরোধী বাসিন্দাদের গায়ে হাত পড়বে, গালাগালি করে রাস্তায় ফেলে মারা হবে— এমনটা ভাবনার বাইরে ছিল শনিবারের আগে পর্যন্ত।

অজয়েন্দু দাশগুপ্ত ও শঙ্খ মাইতি

অজয়েন্দু দাশগুপ্ত ও শঙ্খ মাইতি

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

ভোটের সময় মারামারি, বহিরাগতদের দাপাদাপি আগেও দেখেছে সল্টলেক। রিগিং, ছাপ্পা অপরিচিত নয় সে সবও। কিন্তু নির্বিরোধী বাসিন্দাদের গায়ে হাত পড়বে, গালাগালি করে রাস্তায় ফেলে মারা হবে— এমনটা ভাবনার বাইরে ছিল শনিবারের আগে পর্যন্ত।

শনিবার সল্টলেকের বাসিন্দাদের এ যাবৎ কালের সমস্ত ধারণা-বিশ্বাস নাড়িয়ে-ঝাঁকিয়ে, বেঁকিয়ে-চুরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন কিছু যুবকের দল। যাঁরা শুধু বহিরাগতই নন, যাঁরা অন্য ‘ভাষায়’ কথা বলেন। সল্টলেকের এবি ব্লকের বাসিন্দা প্রীতিকুমার সেনের কথায়, ‘‘এই ভাষার সঙ্গে পরিচয় নেই শিক্ষিত বাঙালির। ওরা গালাগালি করতে করতে শনিবার আমাদের মতো বয়স্ক, নির্বিরোধী মানুষদের রাস্তায় ফেলে মেরেছে। আঘাতটা আমাদের যত না শরীরে লেগেছে, তার চেয়ে বেশি লেগেছে মনের গভীরে।’’ এ বারের পুরভোটে কার্যত গোটা বিধাননগর জুড়ে যে পরিমাণ অশান্তি, গা-জোয়ারি এবং হিংসা দেখা গেল, তা নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা। সিটিজেন্স ফোরামের নেতা, কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষের কথায়, ‘‘এর আগের জমানাতেও রিগিং হয়েছে, বুথ দখল হয়েছে। কিন্তু আমজনতাকে এ ভাবে রাস্তায় ফেলে মারধর করার সাহস দেখাননি কেউ।’’

শনিবার থেকে সব হিসেব ওলটপালোট। আর তা থেকেই এক রকমের আতঙ্ক দানা বেঁধেছে শহরবাসীর মনে। অপরিচিত যুবকের দল শনিবার বিকেলের পরে সল্টলেক ছেড়ে যাওয়ার সময়ে রেখে গিয়েছেন সেই জমাট বাঁধা আতঙ্ক। রবিবার সারাদিন সল্টলেকে ঘুরে চোখে পড়েছে সেই আতঙ্কের ছবি।

শনিবার সকালে বৈশাখী আবাসন থেকে বেরিয়ে মধ্যবয়স্কা মহিলা ভোট দিতে যাচ্ছিলেন এজি প্রাইমারি স্কুলে। তাঁর সঙ্গে মাঝপথেই দেখা সেই যুবকদের সঙ্গে। তাদের তাড়ায় ভয়ে ভোট না দিয়েই পালিয়ে এসেছিলেন ওই মহিলা। পরে তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন সংবাদমাধ্যমে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সকাল থেকেই বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন বলছে— এ সব কথা প্রকাশ্যে বলে ভাল করিনি। এখন আমার মধ্যেও আতঙ্ক কাজ করছে। আজ সকালে হাঁটতে বেরিয়েও ভয়ে বাড়ি চলে এসেছি।’’ একই ভাবে ভোটের কথা তুললেই অনেকেই এ দিন হাতজোড় করে বলছেন, ‘‘ভাই, নামটি দয়া করে লিখবেন না। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। আবার যদি ওরা চড়াও হয়!’’ যে সব মানুষ কোনও ভাবে ভোট দিতে পেরেছেন, ভয়ে রয়েছেন তাঁরাও। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকালে যখন ভোট দিচ্ছিলাম তখন বুথের ভিতরে কয়েক জন ছিল। এখন প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছে, আমি কোথায় ভোট দিয়েছি, ওরা দেখে ফেলেনি তো!’’

উল্টো ছবিও যে একেবারে নেই তা নয়। যেমন, সিএল ব্লকের শঙ্খ মাইতি। পেশায় আইনজীবী শঙ্খবাবু শনিবার দুপুরে অরবিন্দ ইনস্টিটিউট-এ ভোট দিতে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর ভোট পড়ে গিয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বাড়ি ফিরে এসে নির্বাচন কমিশনের কাছে অনলাইনে অভিযোগ দায়ের করি।’’ একই রকম ভাবে প্রতিবাদ করেছেন করুণাময়ীর বাসিন্দা অজয়েন্দু দাশগুপ্তও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে আটটায় বুথের ভিতরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে তিন জন ক্রমাগত ছাপ্পা ভোট দিয়ে যাচ্ছিল। ভোটার তালিকা দেখে যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের নামের উপরে ঢ্যাঁড়া কেটে দিচ্ছিল। আমি প্রতিবাদ করায় শেষ পর্যন্ত ওরা বেরিয়ে যায়।’’

সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ রকম কয়েক জন প্রতিবাদী মানুষকে এখন এক জায়গায় আনতে চায় সিটিজেন্স ফোরাম। রবিবার সন্ধ্যায় এবি-এসি বাজারের সামনে তারা একটি ছোট জমায়েত করে। সেখানে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে এসেছিল প্রীতিকুমার সেনের। অরুণাভবাবু বলেন, ‘‘সল্টলেকের যে বাসিন্দাদের প্ররোচনায় বাইরে থেকে আনা লোকেরা এ রকম তাণ্ডব ঘটাল, তাদের সামাজিক ভাবে বয়কট করুন। পুজোর সময় পাড়ার পংক্তিভোজে বসলে, তাঁদের সবাই মিলে উঠিয়ে দিন।’’

সত্যি কি তা করা সম্ভব!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salt lake municipal election police kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE