ভাঙচুর করা হয়েছে পুলিশের গাড়ি। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বেপরোয়া গাড়িটির গতি দেখে চমকে উঠেছিল রাতের শহর। আশপাশের লোকজন বলাবলিও করছিলেন, ‘‘কিছু একটা হয়ে গেলে আর রক্ষে থাকবে না!’’
মুখের কথাটা শেষ না হতেই গাড়িটি ধাক্কা মারে এক পথচারীকে। বহরমপুরে কুমার হস্টেলের সামনে লুটিয়ে পড়েন মোহন হাজরা (২৪)।
লোকজনের চিৎকারে ছাই রঙের বোলেরোর গতি আরও বেড়ে যায়। গোরাবাজার নিমতলার মোড়ে ফের এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে গাড়িটি। ঘটনাস্থলেই মারা যান রাজু শেখ (৩৮) নামে ওই যুবক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, সাইকেলটি আটকে যায় গাড়ির বাঁ দিকে। রাজুর দেহও আটকে যায় সাইকেলের সঙ্গে। সেই অবস্থাতেই গাড়িটিকে ছুটতে দেখে শিউরে ওঠে বহরমপুর।
পুলিশ জানিয়েছে, কিছু দূর ওই অবস্থায় যাওয়ার পরে রাজুর দেহ ছিটকে যায়। কিন্তু তাঁর সাইকেলটি পাওয়া যায় বহরমপুর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মানকরা রেলগেটের কাছে।
মোহন হাজরা ও রাজু শেখ দু’জনেই বহরমপুরের রঘুনাথতলা ও গোরাবাজারের বাসিন্দা। রবিবার রাতের ওই ঘটনার পরে গাড়ির চালক সুরজিৎ হালদার ও তাঁর সঙ্গী তারক দাসকে গ্রেফতার করেছে বেলডাঙা থানার পুলিশ।
জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘বহরমপুরের সুন্দর কলোনির বাসিন্দা ওই দু’জনকেই মদ্যপ অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মদ খেয়ে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর ফলেই এমন ঘটনা।’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বোলেরো গাড়িটি পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার পলসণ্ডা অফিসের আধিকারিকেরা ব্যবহার করেন।
এ দিন সন্ধ্যায় সুন্দর কলোনির একজনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সুরজিৎ ও তারক দু’জনেই গিয়েছিলেন বহরমপুর শ্মশান ঘাটে। একই কারণে শ্মশানে গিয়েছিলেন মোহন হাজরাও। সেখান থেকে হেঁটে মোহন বাড়ি ফিরছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন ধৃতেরাও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পর পর ওই দু’টি দুর্ঘটনার পরে গাড়ি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন চালক। বহরমপুর থেকে তাঁরা সটান চলে যান মানকরা রেলগেটে। সেখানে গেট বন্ধ থাকায় তাঁরা পর পর দু’টো গেট ভেঙে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বেলডাঙার দিকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ভাবতা রেলগেটে একাধির লরি দাঁড়িয়ে থাকায় তাঁরা আটকে যান। পুলিশ সেখান থেকেই তাঁদের গ্রেফতার করে।
মানকরা রেলগেটের কাছে দাঁড়িয়েছিল একটি পুলিশ ভ্যান। কিন্তু বোলেরো গাড়ির গতি দেখে তাঁদের আটকানোর ঝুঁকি নেয়নি পুলিশ। সেই ক্ষোভে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে বলেও অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শী তারিক ইকবাল, সুমন্ত দাসেরা বলছেন, ‘‘চলন্ত গাড়ির সঙ্গে আটকে রয়েছে একটি দেহ ও সাইকেল। সাইকেলের সঙ্গে রাস্তার ঘর্ষণে আগুন ছিটকোচ্ছে। দৃশ্যটা মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy