স্নেহ: রানিবাঁধে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
কখন ভোট প্রচারে শেষ বার গ্রামে এসেছিলেন নেতারা। নকল ইভিএম দেখিয়ে নির্দিষ্ট একটি চিহ্নে ভোট দিতে বলেছিলেন। তারপর থেকে আর তাঁদের পদধূলি গ্রামে পড়েনি! বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও ওই দলের রাজ্য নেতা সুভাষ সরকারকে সামনে পেয়ে সোমবার এমনই অভিযোগ তুললেন সারেঙ্গা ব্লকের কড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
রবিবার থেকে জেলায় দু’দিন ব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি শুরু করেছেন রূপা, সুভাষবাবু। রবিবার বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের উত্তর দিকে তাঁরা গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের প্রচারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমস্যা শোনেন। সোমবার তাঁরা গেলেন দক্ষিণ বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ, ইঁদপুর, খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, সিমলাপালে সভা করতে।
খাতড়ার সভা থেকে রূপা মানস ভুঁইয়াকে তৃণমূল রাজ্যসভার প্রার্থী মনোনীত করার কড়া সমালোচনা করেন। সুভাষবাবুও মানসবাবু এখন কোন দলে তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। যদিও মানসবাবু পাল্টা কটাক্ষ করে রূপার সম্পর্কে বলেন, ‘‘দ্রৌপদী ধারাবাহিকে ওঁর অভিনয় ভাল লেগেছিল। কিন্তু সিপিএমের দিক থেকে বিজেপির মঞ্চে এসে উনি যে অভিনয় করছেন, সেটা ভাল লাগছে না।’’
রাইপুর থেকে ফেরার পথে ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের একেবারে পাশেই কড়াপাড়া গ্রামে যান তাঁরা। এলাকাটি সারেঙ্গা ব্লকের চিলতোড় পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। সারেঙ্গা ব্লক সদর থেকে ১৩ কিমি এবং রাইপুর ব্লক সদর থেকে সাত কিমি দূরে অবস্থিত ওই গ্রামে ১২-১৩টি পরিবারের বাস। প্রায় সকলেরই খড়ের চালা, মাটির বাড়ি। ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রতিমা দুলের অভিযোগ, “একমাত্র মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। অথচ ব্লক বা পঞ্চায়েতে বারবার আবেদন করার পরেও কোনও সাহায্য পাইনি।” সীমা দুলে, চম্পা দুলেদের অভিযোগ, তাঁরা খড়ের চালা, মাটির বাড়িতে বাস করলেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি। শৌচালয়ও নেই। গ্রামবাসী গুরুপদ দুলের অভিযোগ, ঝড়-বৃষ্টি হলে আশ্রয় খুঁজতে সপরিবার তিনি গ্রামের স্কুলবাড়িতে ছোটেন। কিন্তু সরকারি প্রকল্পে ঘর পাননি।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে সুভাষবাবু বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রকে গ্রামবাসীর সমস্যা নিয়ে ব্লক দফতরে স্মারকলিপি দিতে নির্দেশ দেন। রূপা রাজ্যসভায় এই গ্রামের সমস্যার কথা তুলবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন। ওই গ্রামে অনুন্নয়নের অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি দাবি করেন, “প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ করে ওই সংসদে পুকুর কাটা হয়েছে, রাস্তা হয়েছে। অনেকেই সরকারি প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন। তারপরেও কেন এই অভিযোগ উঠছে জানি না।” তিনি নিজে ওই গ্রামের গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।
বিজেপি-র রাজ্য নেতা সুভাষবাবু বলেন, “জেলায় জনসংযোগ সভায় বিভিন্ন ব্লক থেকে কয়েকশো অভিযোগ আমাদের কাছে উঠে এসেছে। সব অভিযোগই আমরা খতিয়ে দেখে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।” রূপা বলেন, “এই জেলার মানুষ রাজ্যের অপশাসনের পরিবর্তন চাইছেন। এ বার পঞ্চায়েত ভোট থেকেই তা শুরু হবে।”
জেলা সফরের শেষ দিনে রূপা বলেন, ‘‘আমরা বলছি, যে কেউ, যে কোনও দল করতে পারেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে কাউকে মারবে না।’’ তিনি এও জানিয়েছেন, বিরোধীদের অনেকেই তলে তলে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy