মিষ্টিসুখ: রানাঘাটে বুধবার। নিজস্ব চিত্র
মেঘ মেঘ আকাশ, ভোর রাত থেকে ইলশেগুড়ি বৃষ্টি। তা হোক, ‘‘এই যে ভাই, হাঁ করুন দেখি... বড় হাঁ, একটা মুখে পুরে দিই!’’
জাতীয় সড়কের কোলে, হাসি হাসি মুখ, ফুটো ছাতায় কোনওরকমে মাথা আড়াল করে পেল্লাই মাটির হাঁড়ি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন ওঁরা। পথ চলতি ট্রাক থেকে মুখ ব্যাজার টোটো চালক— প্রায় জোর করে মুখে ঠেসে দিচ্ছেন রসগোল্লা। উজ্জ্বল মুখে গাল টোল ফেলে রানাঘাট পুরসভার কাউন্সিলরেরা বুধবার সকাল থেকে রসগোল্লা খাইয়ে গেলেন সক্কলকে।
খুশির কারণ? পাঞ্জাবির খুঁটে রসগোল্লার রস মুছে পুরপ্রধান পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কী বলছেন, খুশি হব না! রসগোল্লার জিআই পেতে রাজ্য সরকারকে তথ্য কম জুগিয়েছি আমরা!’’
পুরসভার দাবি, রসগোল্লার ইতিহাস ঘাঁটলেই বেরিয়ে পড়বে, ছানার ওই গোলাকৃতি মিষ্টির উৎপত্তিস্থল এই রানাঘাট শহর। জিআই পেতে তাই এ শহরের পুরনো লাইব্রেরিগুলো ঘেঁটে নানান তথ্য রাজ্য সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের কাছে পাঠিয়েছিল স্থানীয় পুরসভা। সে সবে বলীয়ান হয়েই রসগোল্লার জিআই-এর দোর খুলেছে বলে তাঁদের দাবি। পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সকাল থেকেই রাস্তায় মিশে গিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। মুক্তি বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁদেরই এক জন, বলছেন, “রানাঘাটের মর্যাদা বেড়ে গেল জানেন, কী ভাল যে লাগছে।’’ শোভনা দত্ত ছুট্টে গিয়ে এক রিকশা চালকের মুখে রসোগোল্লা পুরে দিয়ে বলছেন, ‘‘রসগোল্লার উৎপত্তি এ শহরে, অথচ ক’জন জানে বলুন তো!’’
তবে তাঁদের উৎসাহে জল ঢালল বৃষ্টি, আফশোস তাই যাচ্ছে না। পুর প্রতিনিধি কুশলদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রসগোল্লার উৎপত্তি রানাঘাটে। এ ব্যাপারে বহু তথ্য আমরা সরকারকে পাঠিয়েছিলাম। তার জোরেই ওডিশাকে কুপোকাত করে জিআই জুটল আমাদের।’’
ইতিহাস বলছে, ফুলিয়ার হালুইকর হারাধন ময়রার তখন বেশ নামডাক। সে বার রানাঘাট পাল চৌধুরীদের বাড়িতে ভিয়েন বসেছে। আচমকা সে বাড়ির এক বালিকা কান্না জুড়ে দেয়, ‘মিষ্টি তৈরি করতে এত দেরি কেন!’ হারাধন আর কী করেন, হাতের কাছে কাঁচা ছানা ছিল, ফুটন্ত রসে তাই ফেলে একটা মিষ্টির পদ তৈরি করে দিয়েছিলেন, কে জানত সে দিনের সেই রসগোল্লা এমন তাক লাগিয়ে দেবে সবাইকে, মিষ্টি মানচিত্রে বাংলাকে দেবে আলাদা ঠাঁই। পুরপ্রধান পার্থবাবুও বলছেন, ‘‘হারাধন ময়রার হাতেই ১৮৫৩ সালে রসগোল্লার উৎপত্তি, সে ইতিহাস অনেকেই জানেন না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy