শৃঙ্খলা আর নিয়মানুবর্তিতাকে যারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়, সেই আরএসএসের অনুষ্ঠানেই উল্টো ছবি! রবিবার কল্যাণীতে সকাল সাড়ে ৯টার অনুষ্ঠান যখন শুরু হল, তখন ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁইছুঁই।
আরএসএস-এর সেবামূলক শাখা ‘ক্ষুদিরাম সেবা ভারতী’র অনুষ্ঠান নিয়ে আরএসএস-ই সংবাদমাধ্যমে চিঠি দিয়ে জানায়, প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়, অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্য অতিথিদের নিয়ে সভা শুরু হবে রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। নির্ধারিত সময়ে কল্যাণী ২ নম্বর বাজারের কাছে রামকৃষ্ণ সেবা সঙ্ঘের হলঘরে গিয়ে দেখা গেল, বক্তা-শ্রোতা নেই। খান পঞ্চাশেক খালি চেয়ার। মঞ্চে ক্ষুদিরামের ছবি। উদ্যোক্তারাও জানেন না, কখন শুরু হবে। কেউ বললেন, ‘১০টা নাগাদ আসুন’। কেউ আবার অপেক্ষা করতে বলে জানালেন, সকলে এলে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এ দিন আলোচনার বিষয় ছিল, ‘শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও দেশভাগ’। রক্তদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরও ছিল। সাড়ে ১১টার মধ্যে সে সব শুরু হয় সভাঘরের উপরতলায়। পৌনে ১২টা নাগাদ পৌঁছন অশোকবাবু-সহ বাকিরা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সদস্যদের সভায় ডেকে এনে বসাতে হিমসিম খেতে দেখা গেল উদ্যোক্তাদের। কেউ কেউ এলেন বটে, কিন্তু অনেকে রইলেন বাইরেই। ফলে মেঝেতে বিছানো ত্রিপল ফাঁকা ছিল। ক্ষুদিরামের ছবিতে মালা দিয়ে, প্রদীপ জ্বালিয়ে সভা শুরুর পরে পরিবেশ বুঝেই হয়তো অশোকবাবুও মিনিট পাঁচেকেই বক্তব্য শেষ করলেন। ক্ষুদিরাম সেবা ভারতীর সম্পাদক পার্থিব মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “সেবামূলক কাজের অনুষ্ঠান হওয়ায় সে দিকেই নজর ছিল। অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ফাঁকা মনে হয়েছে।”
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে অশোকবাবুকে। এ বার আরএসএসের সেবামূলক সংগঠনের অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিজেপি শিবিরের একাংশের মত। বর্ধমান-বিস্ফোরণ নিয়ে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি সরকারের সমালোচনায় বলেছিলেন, “আমাদের সঙ্গে ওঁরা কোনও আলোচনা না করে, অপমান করে যাবেন তা হয় না। ওঁরা সংবিধানকে লঙ্ঘন করছেন।” এ দিন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তৃণমূলের নাম না করে অশোকবাবু বলেন, “এ রাজ্যে যে রকম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ হচ্ছে, তাতে কেন্দ্র স্বাভাবিক ভাবেই হস্তক্ষেপ করবে। সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো কেন্দ্রের দিকেই বেশি ঝুঁকে আছে।” তাঁর কটাক্ষ, “অনেকে না বুঝে অনেক কথা বলছেন!” তাঁর আরও বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী বারবার অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে বলছেন। এত দিন কোনও সরকারের পক্ষ থেকেই এই প্রয়াস নজরে পড়েনি। বর্ধমান-কাণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, এর প্রয়োজন কতটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy