ভ্যানিটি ভ্যান থেকে নামছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। খিদিরপুরে। শশাঙ্ক মণ্ডলের তোলা ছবি।
সেই ১৯৩০ সালের বসন্তে যষ্টিমাত্র সম্বল করে ডান্ডি অভিযান করেছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। ২০১৬ সালের অকাল বসন্তে ভ্যানিটি ভ্যান নিয়ে কাকদ্বীপের উদ্দেশে পদযাত্রা করলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়! উপর থেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন গাঁধী। মূর্তি হয়ে! দেখল কলকাতাও। এই প্রথম কোনও রাজনৈতিক মিছিলে ভ্যানিটি ভ্যানের ব্যবহার!
রাজ্যে ক্রমবর্ধমান নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে কামদুনি থেকে কাকদ্বীপ পদযাত্রা করছে বিজেপি-র মহিলা মোর্চা। বুধবার শুরু হয়ে প্রথম দু’দিনে সেই পদযাত্রা পৌঁছেছে ধর্মতলায়। তৃতীয় দিন শুক্রবার মেয়ো রোডের গাঁধী মূর্তির পাদদেশ থেকে ফের হাঁটতে শুরু করেন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী রূপা, রাজ্য বিজেপি-র সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়, সাত্তোরের নির্যাতিতা-সহ দলীয় কর্মীরা। সঙ্গে চলেছে ওই ভ্যানিটি ভ্যান এবং জেনারেটর। ভ্যান এবং জেনারেটর মিলিয়ে ভাড়া ৮ ঘণ্টায় ২০ হাজার টাকা। ভ্যানের ভিতরে রয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় বিশ্রাম, সাজগোজের ব্যবস্থা ও টয়লেট। যেমন ভ্যান সফরসঙ্গী হয় শাহরুখ খান-সহ বলিউড তারকাদের শ্যুটিংয়ে!
মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিন থেকেই যাত্রার সঙ্গী হয়েছে ওই আরাম-যান। যাতে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বা শৌচালয় ব্যবহারের প্রয়োজন হলে ওই যানে উঠতে পারেন রূপা। পদযাত্রা শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘণ্টা পরে খিদিরপুরের একটু আগে এ দিন যেমন রূপাকে মিছিলে দেখা যাচ্ছিল না। সেই সময় সেখানেই দাঁড়িয়েছিল ওই আরাম-যান। মিছিল অবশ্য থামেনি। কিছু ক্ষণ পর দেখা যায়, রূপা এক কর্মীর মোটরবাইকে চড়ে মিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছেন। মিছিলে যোগদানকারী অন্য মহিলারা অবশ্য ওই ভ্যানে উঠছেন না। তাঁদের জন্য দলের তরফে বরাদ্দ হয়েছে রাস্তার ধারের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পের টয়লেট। এ ছাড়া, মধ্যাহ্নভোজ যেখানে সারছেন, সেখানেই অন্য প্রয়োজনও মিটিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।
রূপাদের মিছিলের নিশানা যিনি, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক জীবনে অগণিত মিছিল করেছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে শুরু করে বাম নেতারাও জীবনভর অজস্র মিছিল-জাঠা করেছেন। সব ক্ষেত্রেই নেতা-কর্মী পথশ্রমে ক্লান্ত হয়েছেন। তাঁদেরও শৌচালয় ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েছে। কিন্তু কোথাওই মেক আপ ভ্যান ব্যবহারের পদ্ধতি নিতে দেখা যায়নি! অভিনয় জগতের অনুষঙ্গ হিসেবেই যা সঙ্গে নিতে পেরেছেন রূপা। শুধু আরাম-যানই নয়। রূপাদের মিছিলে আরও নতুনত্ব আছে। ওই জেনারেটর থেকে হোস পাইপ দিয়ে পুষ্পবৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে মিছিলের মুখে! তবে এ দিন সেই ব্যবস্থা ছিল না। ।
এই সব অভিনব কায়দা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি-রই অন্দরে। দলের একাংশের মতে, এ দেশের যা সাধারণ সমাজব্যবস্থা, সেখানে মেক আপ ভ্যান নিয়ে মিছিল করলে জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে! বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য তা মনে করছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের এক দিনে এত লম্বা হাঁটার অভ্যাস নেই। তাই তাঁর বিশ্রামের জন্য এই ব্যবস্থা করেছি।’’ কিন্তু অন্য রাজনৈতিক দলে তো এই রেওয়াজ নেই? দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘অন্য দলের মিছিলে তো তারকাও নেই! তা ছাড়া, অন্য দলের মহিলারা কি এত লম্বা মিছিল করেন?’’
আর স্বয়ং রূপার যুক্তি, ‘‘বহু বছর ধরে পরিষ্কার বাথরুম ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমরা যখন বাংলায় ক্ষমতায় আসব, তখন কোনও বিরোধী দলের নেতা বা নেত্রীকেই, তিনি যত বড় সেলিব্রিটিই হোন না কেন, ভ্যানিটি ভ্যান ব্যবহার করতে হবে না। কারণ, সে দিন রাস্তার কোনায় কোনায় পরিচ্ছন্ন, সুলভ শৌচালয় থাকবে!’’ আর যান্ত্রিক পুষ্পবৃষ্টি নিয়ে দিলীপবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘জাঁকজমকের জন্যই ওই ব্যবস্থা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy