Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উন্নয়ন-খরচে একশোয় একাই ১০৭ সাংসদ সন্ধ্যা

ফার্স্ট হয়েছেন ‘ফুলেশ্বরী’। মাত্র দু’বছর আগে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। প্রথম বার সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু পিছনে ফেলে দিয়েছেন বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের। রাজ্যে সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের খতিয়ানে এখনও পর্যন্ত সকলের আগে সন্ধ্যা রায়। রুপোলি পর্দার ‘ফুলেশ্বরী’ নিজের দু’বছরে প্রাপ্য ১০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। তহবিলে পড়ে থাকা, আগে খরচ না হওয়া টাকাও ছাড়েননি। সেখান থেকেও ৭১ লক্ষ টাকা উন্নয়নে ব্যয় করেছেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

ফার্স্ট হয়েছেন ‘ফুলেশ্বরী’।

মাত্র দু’বছর আগে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। প্রথম বার সাংসদ হয়েছেন। কিন্তু পিছনে ফেলে দিয়েছেন বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের। রাজ্যে সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা খরচের খতিয়ানে এখনও পর্যন্ত সকলের আগে সন্ধ্যা রায়। রুপোলি পর্দার ‘ফুলেশ্বরী’ নিজের দু’বছরে প্রাপ্য ১০ কোটি টাকা খরচ করেছেন। তহবিলে পড়ে থাকা, আগে খরচ না হওয়া টাকাও ছাড়েননি। সেখান থেকেও ৭১ লক্ষ টাকা উন্নয়নে ব্যয় করেছেন।

সন্ধ্যা রায়ের খুব কাছাকাছি থেকেই দৌড় শেষ করেছেন সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। তিনিও নিজের তহবিলের পুরো টাকাটা খরচ করে ফেলেছেন। আগের পড়ে থাকা অর্থও কাজে লাগিয়েছেন। সন্ধ্যা-সেলিমের স্কোরকার্ডে তাই ১০০-র মধ্যে ১০০-র বেশি নম্বর।

তৃণমূলের সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী, দীনেশ ত্রিবেদীরাও এলাকা উন্নয়নে সাংসদ তহবিলের টাকা খরচে খামতি রাখেননি। এঁরা অবশ্য সকলেই পোড়খাওয়া রাজনীতিক। কেউ ৮০ শতাংশ, কেউ ৯০ শতাংশের বেশি তহবিলের অর্থ ব্যয় করে ফেলেছেন। লোকসভা ভোটে সিনেমা-থিয়েটারের একগুচ্ছ মুখকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের মধ্যেও চমক দেখিয়েছেন শতাব্দী রায়, দেব ওরফে দীপক অধিকারী, অর্পিতা ঘোষেরা। ৭৫%-এর বেশি খরচ করে ফেলে তাঁদের মুখেও সাফল্যের হাসি।

সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় পশ্চিমবঙ্গে কেমন কাজ হচ্ছে, তা জানিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া। প্রতি বছর সাংসদদের মাথাপিছু ৫ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্র। বর্তমান লোকসভার দু’বছরের মেয়াদে সকলেই তাই ১০ কোটি টাকা করে পান। সাংসদরা ওই টাকা নিজেদের ইচ্ছেমতো এলাকার উন্নয়নে ব্যয় করতে পারেন। কেন্দ্রের টাকায় সাংসদদের ইচ্ছেমতো প্রকল্পের কাজ হলেও তা কার্যকর করার দায়িত্ব থাকে জেলা প্রশাসনের উপর। তাই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, ঠিক সময়ে প্রকল্প মঞ্জুর করে যাতে কাজ শেষ হয় এবং সেই নথি যাতে কেন্দ্রের কাছে জমা পড়ে, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যেন সংশ্লিষ্ট অফিসারদের নির্দেশ পাঠান।

নিয়ম অনুযায়ী, এক বছর পুরো টাকা খরচ না হলে তা তহবিলেই জমা থাকে। পরের বছর তা খরচ করা যায়। কিন্তু সদানন্দর যুক্তি, ঠিক সময়ে কাজ শেষ না হলে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যায়। ওই চিঠিতেই চলতি বছরের ২৭ জুলাই পর্যন্ত কোন সাংসদের এলাকায় কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসেব পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেই খতিয়ানই বলছে, মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায় ১০০-র জায়গায় ১০৭ শতাংশ অর্থ খরচ করে ফেলেছেন।

কী করে এমনটা সম্ভব হল? সন্ধ্যা বলেন, ‘‘রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ হলেও আমি গ্রামের মেয়ে। সিনেমাতেও গ্রামের মেয়ের চরিত্রই বেশি করেছি। গ্রামের সমস্যাগুলো তাই অজানা নয়। সাংসদ হয়ে তাই ছকে ফেলেছিলাম, কী করব। তাই বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট তৈরি, স্কুলে কম্পিউটার থেকে রাস্তার আলোর মতো সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে টাকা খরচ করেছি। জেলার নেতৃত্ব ও প্রশাসনও আমাকে সহযোগিতা করেছেন।’’

সন্ধ্যা রায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতার কথা বললেও মুর্শিদাবাদের ছবিটা অন্য। রাজ্যের সাংসদদের মধ্যে এই জেলার পারফরম্যান্স সবথেকে খারাপ। কংগ্রেসের অধীর চৌধুরী এবং অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, সিপিএমের বদরুদ্দোজা খান— তিন সাংসদই কম-বেশি জেলা প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। অধীরবাবুর খতিয়ান বলছে, তাঁর কোনও অর্থই ব্যয় হয়নি। বদরুদ্দোজার মাত্র ১৮ শতাংশ। অভিজিৎ তুলনায় ভাল, ৩৫ শতাংশ ছুঁয়েছেন। অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমি ১০ কোটির মধ্যে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছি। ওই চিঠি আসার পরে আরও কাজ হয়েছে। তবে প্রশাসনের কাজে আরও গতি বাড়ানো উচিত।’’ অধীর ও বদরুদ্দোজা সরাসরি জেলা প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলছেন। তাঁদের অভিযোগ, জেলাশাসকের অফিসকে তৃণমূলের অফিস বানানো হয়েছে। তাঁরা বিরোধী দলের সাংসদ বলেই কাজে অসহযোগিতা করা হচ্ছে। অধীর বলেন, ‘‘আমি ১০ কোটির মধ্যে ৮ কোটি টাকার কাজ দিয়েছি। অর্ধেক কাজ হয়েছে। সেই কাগজও জমা দেয়নি। এই সব কাজে নজরদারির জন্য যে কমিটি রয়েছে, ২০১২ থেকে আমি তার চেয়ারম্যান। চার বছরে তার বৈঠকই ডাকা হয়নি।’’

মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্যামল মণ্ডল এ সব অভিযোগ মানছেন না। তাঁর দাবি, ‘‘জেলায় সব কাজ নিয়ম মেনেই হচ্ছে।’’ এ ক্ষেত্রে রাজনীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের সৌগত রায়। নিজে ৯৩ শতাংশ খরচ করেছেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘ও সব অভিযোগ মিথ্যে। আসলে ঠিক সময়ে কাজ হল কি না, এক দফা কাজ শেষের শংসাপত্র জমা পড়ল কি না, যাতে পরের দফার টাকা আসে, তার জন্য সাংসদদের একটু লেগে থাকতে হয়।’’

পিছিয়ে রয়েছেন দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। তাঁর তহবিলের মাত্র ৩.৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। সুরেন্দ্রর অবশ্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘‘আমি ইচ্ছে করেই টাকা খরচ করিনি। কারণ প্রথমে পুরসভা, তার পর মহকুমা পরিষদ, বিধানসভা ভোটের জন্য আদর্শ আচরণবিধি চলছিল। সব মিটে গিয়েছে। এ বার কাজ শুরু হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Development sandhya roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE