সঞ্জয় রায়
কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। তবে কোন ‘লাগামছাড়া’ খরচে অ্যাপোলোয় ভর্তি ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের চিকিৎসার বিল সাত দিনে ছুঁয়েছিল ৭ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা?
মঙ্গলবার থেকে সেই তদন্ত শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে সামনে এসেছে এমন তথ্য, যাকে ‘বিস্ফোরক’ আখ্যা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তারাই। তাঁদের মতে, হাঁড়ির একটি চাল টিপলেই যেমন বোঝা যায় ভাত সেদ্ধ হয়েছে কি না, তেমন ওই নজিরই প্রমাণ করছে, এই বেসরকারি হাসপাতালে কেন বহু রোগীকে সর্বস্বান্ত হতে হয়।
লিভার থেকে অবিরাম রক্তক্ষরণ ঠেকাতে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন নামে একটি প্রক্রিয়া করতে হয়েছিল সঞ্জয়ের। অ্যাপোলো যার খরচ নেয় ১ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। অথচ রাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকের মতে, একটি যথাযথ মানের প্রতিষ্ঠানে ওই খরচ বড়জোর ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতাল হলে সবটাই ফ্রি। যখন সেখানে এর খরচ লাগত, তখনও ১০ থেকে ১২ হাজারের বেশি বিল হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তারা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এই ধরনের নজিরই বুঝিয়ে দিচ্ছে, কী ভাবে এক একটি খাতে ‘মাত্রাছাড়া’ খরচ দেখিয়ে যে কারও বিল হু হু করে বাড়ানো হয়।
অ্যাপোলোর চিকিৎসার নথি জানাচ্ছে, অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশনের খরচ তারা তিন ভাগে ভেঙে দিয়েছিল। যদিও সাধারণ ভাবে ওই তিনটি খাত মিলিয়েই খরচ ধরার কথা। স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, ১ লক্ষ ২৪ হাজার ৩২০ টাকা, ৩৬ হাজার ১১০ টাকা এবং ৯ হাজার ৭০ টাকার তিনটি খরচ মিলিয়ে অ্যাপোলো এম্বোলাইজেশনের খরচ দেখিয়েছে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রক্রিয়াটি করেন রেডিওলজিস্ট ঊষা গোয়েন্কা। এ দিন একাধিক বার তাঁকে ফোন, এসএমএস করা হয়। জবাব মেলেনি।
দুর্ঘটনায় লিভারে গুরুতর আঘাত লেগেছিল সঞ্জয়ের। অবিরাম রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে অস্ত্রোপচার জরুরি হলেও বাকি শারীরিক মাপকাঠি অস্ত্রোপচারের অনুকূল ছিল না। তাই রক্তক্ষরণের উৎস বন্ধ করতে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন করা হয়। কলকাতার একাধিক গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট এবং রেডিওলজিস্ট জানিয়েছেন, এই বিল তাঁদেরও স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কোন চিকিৎসার কী খরচ রাখবে সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত হতেই পারে। কিন্তু তারও একটা মাত্রা থাকা দরকার। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বাজেট হোটেলে খাওয়ার খরচ আর পাঁচতারা হোটেলের খরচ এক নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ক্রমাগত যা বলছেন, অর্থাৎ হাসপাতাল আর প্রোমোটিং ব্যবসা এক নয়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।’’
কী বলেছেন অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ? সিইও জয় বসু বলেন, ‘‘কী ধরনের সরঞ্জাম ব্যবহার হয়েছে, তার উপরে খরচ নির্ভর করে। কোনও হৃদরোগীর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির বিল-ও তো কোথাও বেশি, কোথাও কম হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy