২০১১-এ সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসি-ম্যাচে হাজির মদন মিত্র।—ফাইল চিত্র।
জেরা পর্বটা শুরু হয়েছিল মসৃণ ভাবেই। গোয়েন্দাদের বাছা বাছা প্রশ্নের সামনেও উত্তরগুলো ঠিক মতোই মিলছিল। কিন্তু রোজ ভ্যালির সঙ্গে যোগ এবং কলকাতায় লিওনেল মেসি-ম্যাচের সম্প্রচার নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই সটান বিছানায় শুয়ে পড়লেন রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী মদন মিত্র! তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল। অস্বস্তিতে গোয়েন্দারা। মুহূর্তে ছুটে এলেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা তদন্তকারীদের অনুরোধ করেন, জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ করতে। চিকিৎসকেরা এ-ও জানান, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রীর শারীরিক কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। অগত্যা জেরা বন্ধ রেখেই উঠে পড়তে হল সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের।
আজ জেরাপর্ব আচমকা স্থগিত করে দিতে হলেও তাঁরা যে ফের মন্ত্রীকে জেরা করবেন, তা জানিয়ে এক সিবিআই কর্তা বলেন, ‘‘আদালত মদনবাবুকে জেরা করতে সাত দিন দিয়েছে। তদন্তকারীরা চিকিৎসকদের অনুমতি নিয়েই ফের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।’’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অসুস্থতার কারণে সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা না গেলে ফের আদালতের কাছে তাঁকে জেরার অনুমতি চাইবে সিবিআই।
এসএসকেএম হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উডবার্ন ওয়ার্ডে মদন মিত্রকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। এই পর্ব স্বাভাবিক গতিতেই চলছিল। প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু পৌনে ১২টা নাগাদ রোজ ভ্যালি প্রসঙ্গ উঠতেই মদনবাবু অসুস্থ বোধ করছেন বলে গোয়েন্দাদের জানান।
এ দিনের জেরাপর্ব থেকে কী জানা গেল? বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা সারদার সঙ্গে রোজ ভ্যালি গোষ্ঠীর সঙ্গেও পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের নিবিড় যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করল সিবিআই। রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের অনেকেই সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে বলে অভিযোগ। আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই জানায়, প্রভাবশালী মন্ত্রী হয়ে মদনবাবু সারদা গোষ্ঠীকে সরকারি সুবিধাও পাইয়ে দিয়েছেন। তদন্তকারীদের এও দাবি, শুধু সারদা নয়, রোজ ভ্যালির সঙ্গেও মদনবাবুর নিবিড় যোগাযোগ ছিল এবং ওই সংস্থাকেও তিনি নানা সরকারি সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। তার নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সিবিআইয়ের হাতে এসেছে বলেও খবর। শুক্রবার এসএসকেএম-এ গিয়ে মদনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই যোগাযোগের কিছু তথ্যপ্রমাণ তাঁর সামনে পেশও করেন তদন্তকারীরা। সেই প্রসঙ্গেই ওঠে কলকাতায় মেসি-ম্যাচের প্রসঙ্গ।
সূত্রের খবর, মদনবাবুর সঙ্গে রোজ ভ্যালির কর্তাদের যোগাযোগের প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। দেখা গিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে সারদা ও রোজ ভ্যালির নানা সংবাদমাধ্যম তৃণমূলের হয়ে প্রচার চালায়। রাজ্য ক্রীড়া দফতরের উদ্যোগে ২০১১ সালে সল্টলেক স্টেডিয়ামে মেসি-ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার সত্ত্ব পেয়েছিল সারদা গোষ্ঠীর একটি চ্যানেল। অসম-গুয়াহাটি-শিলং এলাকায় ওই খেলার সরাসরি সম্প্রচারের সত্ত্বও দেওয়া হয় রোজ ভ্যালির চ্যানেলকে। ওই সময় রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন মদনবাবু।
সূত্রের খবর, ই এম বাইপাস লাগোয়া একটি পাঁচতারা হোটেলে রোজভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন মদনবাবু। সেই বৈঠকে যা আলোচনা হয়, তা-র নথিও পেয়েছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। এসএসকেএম-এ জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ দিন মন্ত্রী মদনবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, মেসি-ম্যাচের সরাসরি সম্প্রচার সত্ত্ব শুধু সারদা ও রোজ ভ্যালিকেই কেন দেওয়া হয়েছিল? সিবিআইয়ের দাবি, ওই সম্প্রচার বাবদ কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়।
সিবিআইয়ের দাবি, ওই সম্প্রচার বাবদ কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়। সিবিআইয়ের দাবি, ওই সম্প্রচার নিয়ে দু’টি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল। ক্রীড়া দফতরের মাধ্যমে ওই দু’টি সংস্থাকে সম্প্রচার সত্ত্বের মাধ্যমে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রমাণও সিবিআইয়ের হাতে এসেছে।
সূত্রের খবর, এ দিন মদনবাবুর কাছে জানতে চাওয়া হয়, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে তিনি কি নিজেই ওই সম্প্রচার সত্ত্ব দু’টি অর্থলগ্নি সংস্থাকে দিয়েছিলেন? না অন্য কারও নির্দেশে বাধ্য হয়েছিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তিনি বাধ্য হয়েছিলেন। এর পরেই মন্ত্রী সটান বিছানায় শুয়ে পড়েন। জানান, তিনি অসুস্থ বোধ করছেন। তাঁর আবার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখনই চিকিৎসকদের অনুরোধে জেরা পর্ব থামিয়ে দেন তদন্তকারীরা।
অসম, গুয়াহাটি ও শিলং এলাকায় রোজভ্যালি আমানতকারীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছে বলে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা জানান। সম্প্রতি রোজভ্যালির বিরুদ্ধে অসমে মামলাও দায়ের করেছে সিবিআই। সেই সূত্রেই ওই সংস্থার অনেক তথ্য তদন্তকারীরা পেয়েছেন বলে সিবিআইয়ের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy