Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিরাপত্তায় ত্রিস্তর বলয় জলসীমান্তে

এক দিকে বঙ্গোপসাগরে চিনের আনাগোনা, তার উপরে রাজ্যে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ডেরার সন্ধান। দুইয়ে মিলিয়ে নিরাপত্তার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা-ব্যূহ বহু গুণ জোরদার করা হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৩
Share: Save:

এক দিকে বঙ্গোপসাগরে চিনের আনাগোনা, তার উপরে রাজ্যে বাংলাদেশি জঙ্গিদের ডেরার সন্ধান। দুইয়ে মিলিয়ে নিরাপত্তার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ স্পর্শকাতর হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তা-ব্যূহ বহু গুণ জোরদার করা হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিক কমো়ডর সুপ্রভকুমার দে-র দাবি, রাজ্যের সাগরসীমান্ত আগের থেকে অনেক বেশি সুরক্ষিত। আগামী ৪ ডিসেম্বর নৌসেনা দিবস। তার আগে, শুক্রবার সুপ্রভবাবু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। কয়েক দিন আগেই কেন্দ্র ও রাজ্যের উদ্যোগে ‘সাগর কবচ’ নামে যৌথ মহড়া হয়েছে। সাগরে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত টহলদারি চলছে।’’

নদীপথে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করেছে পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীও। নৌসেনার খবর, ড্রোন বা উড়ুক্কু যানের সাহায্যে নজরদারি চালানো যায় কি না, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বিএসএফের কর্তারা। এত দিন সাগরে কোনও দুষ্কৃতী বা জঙ্গি ধরা পড়লে এ দেশে তার তদন্ত ও বিচারের উপায় ছিল না। কারণ, কোনও উপকূলীয় থানার অধীনে সাগর ছিল না। মাস ছয়েক আগে নয়াচরে উপকূলীয় থানা গড়ে সাগরে ধরা পড়া অপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্তের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নৌসেনা কমোডর জানান, মুম্বইয়ে ইয়েলো গেট থানার হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে। প্রতিটি উপকূলীয় রাজ্যেই এমন একটি থানা গ়ড়ার কথা।

২০০৮ সালে মুম্বইয়ে হামলার সময়ে মৎস্যজীবীদের নৌকো ছিনিয়ে এ দেশে ঢুকেছিল আজমল কাসবেরা। তার পরেই উপকূলীয় নিরাপত্তাকে ঢেলে সাজতে শুরু করে কেন্দ্র। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের খবর, সম্প্রতি চিনও বঙ্গোপসাগরে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। তাই বঙ্গোপসাগরের উপরে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। এ রাজ্যে অনুপ্রবেশের জন্য সব থেকে অরক্ষিত সুন্দরবন এলাকা। নৌসেনার খবর, ‘ইউএভি’ বা চালকহীন বিমান দিয়ে জঙ্গলঘেরা সুন্দরবনে নজরদারি সম্ভব নয়। তাই নৌকা নিয়ে তল্লাশিতেই জোর দেওয়া হচ্ছে।

নৌসেনার ক্যাপ্টেন হিমাদ্রি সরকার জানান, নজরদারি ও আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

‘ত্রিগুণ’ নামে একটি সফটঅয়্যারের সাহায্যে ভারতীয় উপকূল দিয়ে যাওয়া সব জাহাজের তথ্য জোগ়া়ড় করা হয়। ‘অবগাহ’ নামে অন্য এক সফটঅয়্যার উপকূলীয় গ্রামের প্রশাসনিক ও বাসিন্দাদের তথ্য সংরক্ষণ করছে। দেশের পুরো উপকূলকে রেডার নেটওয়ার্কের অধীনে আনা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের খবর, মুম্বই-হামলার পরে মৎস্যজীবীদের সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে বলা হয়েছিল। কারণ, নিরাপত্তাবাহিনীর চোখ-কান হিসেবে কাজ করেন তাঁরাই। কিন্তু এ রাজ্যে মৎস্যজীবীদের মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা তুলনামূলক কম। অনেকেরই বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র নেই। নৌবাহিনী এ দিন জানায়, বায়োমেট্রিক পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজ চলছে। ৭০% মৎস্যজীবী কার্ড পেয়েছেন। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে বিপদে প়ড়লে পরিচয়পত্র যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝানো হচ্ছে ধীবরদের। ‘‘উপকূলবর্তী গ্রামগুলিতে চিকিৎসা শিবির করার ফাঁকে এই ধরনের জনসংযোগের কাজও করি আমরা,’’ বললেন নৌসেনার এক কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE